বগুড়ার শেরপুর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ে দুর্নীতিবিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ব্যবহৃত ল্যাপটপে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি প্রদর্শনের ঘটনায় শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা ও বিতর্ক। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে উপজেলা শিক্ষা প্রশাসন।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য যাচাই-বাছাই করে তথ্যগুলো এ প্রতিবেদকের হাতে আসে।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) শেরপুর পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত হয় দুর্নীতিবিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতা। শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যায়, প্রতিযোগিতায় ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপের পেছনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত একটি পোস্টার লাগানো রয়েছে।
এদিকে গত বছর ৫ আগস্টের পর সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, পতিত সরকারের কোনো ছবি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাখা যাবে না। এই নির্দেশনা অমান্য করার অভিযোগে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু সাঈদ শেখকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। গত রবিবার প্রধান শিক্ষক নোটিশটি গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয় অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহমুদুল হাসান খোলা কাগজকে বলেন, সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট প্রসেসিং শুরু করেছে। আমার মনে হয় সত্যতা প্রমাণিত হলে শাস্তি হওয়া উচিত, যেন অন্য কেউ আর সাহস না পায়। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইনবহির্ভূত প্রতীক বা ছবি থাকা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আশা করি, তদন্তের মাধ্যমে সঠিক সমাধান আসবে।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. আবু সাঈদ শেখ বলেন, শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত ল্যাপটপটি দীর্ঘদিন ব্যবহার হয়নি। ওইদিন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় লক্ষ না করেই ল্যাপটপটি বের করা হয়। বিষয়টি নজরে আসার পরেই ওই দিন ছবিটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এটি আমার কোনো ইচ্ছাকৃত কাজ নয়, অসাবধানতাবশত ঘটেছে। আমি লিখিত জবাবে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছি।
এদিকে ল্যাপটপ বিতর্কের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের নামফলক নিয়েও নতুন অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে বিদ্যালয়ের ভবন উদ্বোধনের সময় তৎকালীন বিএনপি দলীয় এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের নামফলক ছিল।
অভিযোগ রয়েছে, পরবর্তীতে সেটি অপসারণ করা হয়েছে। ২০২১ সালের ২৪ জুন তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি হাবিবর রহমান দ্বিতল ভবনের উদ্বোধন করেন। এছাড়া নতুন দ্বিতল ভবনে নামফলক স্থাপন না করে নিচের তলায় থাকা গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের নামফলক সরিয়ে সেই স্থানে নতুন নামফলক প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক নূর উন নবী সিদ্দিকী ও সহকারী শিক্ষক সাহেব আলী জানান, ফ্যাসালিটিজ ডিপার্টমেন্টের বাস্তবায়নে উদ্বোধক হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের নামফলক ছিল, এটা সবাই জানে।
প্রধান শিক্ষক মো. আবু সাঈদ শেখ নামফলক প্রসঙ্গে বলেন, সেই সময় গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ ভবন উদ্বোধন করেছেন শুনেছি। সেই সময়ের কোনো শিক্ষকও আর নেই। সিরাজ সাহেবের কোনো ফলক আমি আসার পরে দেখিনি। ভবন মেরামতের সময় পুরো ভবন চটিয়ে কাজ করা হয়। ভবনের সঙ্গে বাস্তবায়নে ফ্যাসালিটিজ ডিপার্টমেন্টের নাম ছিল।
এ বিষয়ে বগুড়া জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রমজান আলী আকন্দের মন্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনে আফরোজা এ বিষয়ে বলেন, আমি যোগদানের পর থেকেই সবাইকে ওয়েবসাইট আপডেট করতে এবং আগের সব ছবি সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছি। বিতর্কিত ছবি সম্বলিত ল্যাপটপ কীভাবে অনুষ্ঠানে এলো, সে বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানের (প্রধান শিক্ষক) জবাব বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কেকে/ আরআই