প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৮:৩৯ পিএম আপডেট: ২৩.০৯.২০২৫ ৮:৫৯ পিএম

প্রতিষ্ঠার সাত বছরেও আলোর মুখ দেখেনি সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে শুরুতেই হোঁচট খায় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দেশের চতুর্থ এই সরকারি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। সাত বছরেও কর্মকর্তা-কর্মচারির চাকরি স্থায়ী করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর যারা অস্থায়ী (এডহেক) ভিত্তিতে চাকরিতে যোগদান করেছিলেন, তাদের ভেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে প্রায় আড়াই বছর ধরে। এ অবস্থায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন প্রায় ২ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারি।
জানা যায়, ২০১৮ সালের অক্টোবরে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিকল্পনায় ছিল বিশাল ক্যাম্পাস, আধুনিক গবেষণাগার, আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরি, নার্সিং ও ডেন্টাল অনুষদ এবং এক হাজার শয্যার একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনজন ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) দায়িত্ব পালন করলেও স্থায়ী ক্যাম্পাসেও যেতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে। হাসপাতালের ১০তলা ভবনের আইসিইউ বিভাগের একটি কক্ষে অফিস করেন ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল পাটওয়ারি। আর সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের একটি কক্ষে অফিস করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ডা. জিয়াউর রহমান। তিনি এই কলেজের অধ্যক্ষ।
সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে দাপ্তরিক কার্যক্রম প্রসঙ্গে উপাচার্য ডা. মো. ইসমাইল পাটওয়ারি বলেন, ‘অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কাজের পরিবেশ নেই, সব ভাঙচুর করা হয়েছে। আগে যারা আন্দোলনরত ছিল, সব সময় তাদের তোপের মুখে পড়তে হয়। এ জন্য সেখানে কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে ‘
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পাস থাকা সত্ত্বেও সেখানে অফিস করেন না ভিসি। ফলে নষ্ট হচ্ছে কগ দামি জিনিস ও আসবাবপত্র। তাছাড়া নিয়ম বহির্ভূতভাবে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দিয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজের একটি রুম কাজ করাচ্ছেন ভিসি।
অবশ্য ভিসির দাবি, অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কাজের পরিবেশ নেই। সেখানে গেলে আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষোভের মুখে তাকে পড়তে হতে পারে। যে কারণে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যলয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠলে তদন্তে নামে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। পরে দুদকও তদন্ত শুরু করলে প্রাথমিক সত্যতা পায়। দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মুর্শেদ আমদ চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার নঈমুল হক চৌধুরীসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ২৫ এপ্রিল ৫৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। দুদকের সেই মামলায় এরই মধ্যে আত্মসমর্পণ করলে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জেলহাজতেও পাঠান আদালত।
অপদিকে নানা করণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে স্থবিরতা দেখা দেয়। তাছাড়া দুদকের মামলার আসামি হওয়ায় অনেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন। আর যাদের বিরুদ্ধে দুদক কোনো অনিয়মের প্রমাণ পায়নি, তারাও পড়েছেন অনিশ্চয়তায়। উত্তোলন করতে পারছেন না বেতন-ভাতা। এ অবস্থায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা ছাড়াই অফিসে আসা-যাওয়া করেন।
গত শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে বিগত ১১তম সিন্ডিকেটে গঠিত নিয়োগ কমিটি যাদেরকে সুপারিশ করেছে, তাদের তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বরাবর পাঠানো, ৭৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বয়স প্রমার্জনের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রারম্ভিক পর্যায়ে যোগদানের ক্ষেত্রে যাদের বয়স ৩০ ছিল, তাদের ক্ষেত্রে প্রমার্জনের বিষয়টি বিবেচনার প্রস্তাব এবং হাইকোর্টে যে সব পদে রিট করা হয়েছে, সে সব পদ ব্যতিরেকে নতুন করে ৩২টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক অগ্রগতি ও জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে সিন্ডিকেট সভায় বহু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য ও রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর কথা। কিন্তু ভিসি কতটুকু কাজ করছেন, সেটা তিনি ছাড়া আর কেউ বলতে পারবেন না।’
এ বিষয়ে মো. ইসমাইল পাটওয়ারি বলেন, ‘আগের সব নিয়োগ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য অনুমোদন দিলে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে, আগে যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের মধ্যে যাদের চাকরির বয়স রয়েছে, তাদের বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। তিনি বিবেচনা করলে যারা আগে কাজ করতো, তাদের বিষয়টা দেখা হবে।’