কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িসহ প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার দখল উৎসব ঠেকাতে আইনী নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। ৮ কর্মকর্তা বরাবরে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) এই নোটিশটি ডাক যোগে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেলার আইনজীবী জাকিয়া সুলতানা।
‘নোটিশ অব ডিমান্ড ফর জাস্টিস’ বিষয়ের নোটিশটিতে হাইকোর্টে দায়ের করা ২০১১ সালের ৭ জুনে মামলার (নম্বর ৬২৬/২০১১) রায় বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়া হয়েছে। নোটিশ পাঠানো ৮ কর্মকর্তা হলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের সচিব, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তর, কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক।
নোটিশটিতে বলা হয়, ‘বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত তার অপরূপ সৌন্দর্য ও বিরল প্রজাতির প্রাণবৈচিত্রের জন্য বিশ্বখ্যাত। বিচিত্র প্রজাতির কচ্ছপ ও লাল কাঁকড়া এ সমুদ্র সৈকতের অন্যতম আকর্ষণ। পরিবেশগত তাৎপর্য বিবেচনায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে টেকনাফ সমুদ্র সৈকতের ১০ হাজার ৪৬৫ হেক্টর এলাকার প্রাণবৈচিত্র্য, নির্মল জলরাশি এবং পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষার জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে এ এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে; যেখানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংসকারী সব কার্যক্রম।’
নোটিশে আরও বলা হয়, ‘এই গেজেট অনুযায়ী সৈকতের বেলাভূমিতে স্থাপনা নিষিদ্ধ। কিন্তু আইন না মেনে দীর্ঘদিন ধরে স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত থাকায় ২০১৭ সালে বেলা’র করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সৈকতের জোয়ার-ভাটার মধ্যবর্তী লাইন থেকে প্রথম ৩০০ মিটার ‘নো ডেভেলপমেন্ট জোন’ উল্লেখ করে এ এলাকায় কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না বলে নির্দেশনা দেয় উচ্চ আদালত।’
‘এ সংক্রান্ত বিষয়ে বেলার মামলার প্রেক্ষিতে রায় থাকলেও কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে সম্প্রতি দেড় শতাধিক দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। আর এসব দোকান নির্মাণে জেলা প্রশাসনের অনুমতি রয়েছে বলে সংবাদে প্রকাশ হয়েছে। সমুদ্র সৈকতের ১০০ মিটারের মধ্যে বালিয়াড়ি দখল করে এসব দোকান স্থাপন করা হয়েছে। পরিবেশ অধিনগুনের বরাত দিয়ে সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সমুদ্র সৈকতের লাবনী, সুভাজা ও কলাতনী পয়েন্টে বালিয়াড়ি দখল করে ২০০টি স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। যা সমুদ্র সংবেদনশীল পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাকে হুমকি।’
মূলত গত শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে সৈকতের বালিয়াড়িতে বসানো শুরু করে শতাধিক দোকান। ইতোমধ্যে বসানো শতাধিক দোকান একই ধরনের রঙ ও আকৃতির দেখা মিলেছে। দোকান স্থাপনকারি তারেক নামের এক যুবক জানিয়েছেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে টাকা দিয়ে তিনি দোকান বসানোর অনুমতি পত্র নিয়েছেন। এই জন্যই দোকান বসিয়েছেন। আর এই অনুমতি পত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুগন্ধা ঝিনুক মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জয়নাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘যদি বৈধ হন তাহলে রাতের আধাঁরে কেন দোকান বসাতে হবে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের সাথে অন্যায় হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী একটি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে দোকান বসাচ্ছেন।’
ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য বলছে, এই দখল ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন আলোচিত দুই ব্যক্তি জাকির হোসেন ও নূরুল হুদা ওরফে গুরামিয়া। সম্প্রতি তারা নতুন করে ৭৪টি কার্ড কিনেছেন এবং রাতের আঁধারে দোকান বসানোর চেষ্টা চলছে।
অভিযোগের বিষয়ে নুরুল হুদা ওরফে গুরামিয়া সব অস্বীকার করেন।
অপর অভিযুক্ত জাকির হোসেন দাবি করেন, তার কেবল একটি দোকান আছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজিম খান বলেন, ‘দোকান বসানো ব্যক্তিদের কাগজপত্র দেখাতে বলা হয়েছে। অবৈধভাবে দোকান বসানোর কোন সুযোগ নেই।’
জেলা প্রশাসনের অনুমতিপত্রের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘অনুমতি পত্রে বালিয়াড়ি এবং পরিবেশ নষ্ট হয়- এমন স্থানে দোকান না বসানোর শর্ত রয়েছে।’
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘বীচ দখল করে দোকান বসানো কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইতোমধ্যে তাদের কাগজপত্র যাচাই চলছে। জেলা প্রশাসন অনুমতি দিলে তাদের কোথায় বসানো হবে স্থান নির্ধারণ করে দেবেন। বালিয়াড়ি বসানো দোকান সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।’
কেকে/ এমএ