দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ২০২৫ নিরাপদ ও নির্বিঘ্নভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ৯ দিন সারাদেশের ৩১,৫৭৬ পূজামণ্ডপে মোতায়েন থাকবেন দুই লক্ষাধিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আনসার-ভিডিপি সদস্য-সদস্যা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এই বিশাল নিরাপত্তা কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পূর্বে বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ সদর দপ্তর এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী, আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য এবং আনসার-ভিডিপি সদস্য-সদস্যাদের যথাযথ দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। তিনি নিরাপত্তা দায়িত্ব পালনে সতর্কতা, আন্তরিকতা ও জনগণবান্ধব মনোভাবের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। বাহিনীর চলমান সংস্কার কার্যক্রমের আওতায় প্রায় ২ লক্ষ তরুনকে ইতিমধ্যে গণপ্রতিরক্ষার নতুন ধারায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হিসেবে বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নব সংযোজিত AVMIS সফটওয়্যারের মাধ্যমে সকল সদস্যের রেজিস্ট্রেশান ও হালনাগাদ তথ্য যাচাই করে পূজার নিরাপত্তা দায়িত্ব নির্ধারণ করা হচ্ছে। উৎসবকালীন দায়িত্ব পালনে যথাযথতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বাহিনীর STDM সফটওয়্যার প্রবর্তন করা হয়েছে।
এছাড়াও পুজা উৎসবে কুচক্রী মহলের গুজব প্রতিরোধ ও সব অশুভশক্তি মোকাবেলায় ডিউটিরতদের জন্য Incident Report কার্যক্রম চালু করায় নিরাপত্তা পরিধি বৃদ্ধি হয়েছে। পাশাপাশি, দক্ষ ও যোগ্য সদস্য-সদস্যা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বাহিনী সর্বস্তরে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্হাপনা ও দায়বদ্ধতায় যে কোনো প্রভাবক হতে মুক্ত রাখার ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
আসন্ন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে পূজামণ্ডপগুলোকে নিরাপত্তা ঝুঁকির ভিত্তিতে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। অধিক গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপে আটজন, গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপে ছয়জন এবং সাধারণ পূজামণ্ডপে ছয়জন করে আনসার-ভিডিপি সদস্য-সদস্যা দায়িত্ব পালন করবেন। একইসাথে, দেশের ৬৪ জেলায় ৯২টি ব্যাটালিয়ন আনসার স্ট্রাইকিং ফোর্স টিম মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি টিমে ছয়জন করে সদস্য থাকবেন, যারা নিয়মিত টহল পরিচালনা ছাড়াও যে কোনো আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকবেন। এবারের নিরাপত্তা কার্যক্রমকে আরও কার্যকর ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে মোতায়েনকৃত সদস্যরা তাদের নির্ধারিত দায়িত্বের পাশাপাশি ‘শারদীয় সুরক্ষা অ্যাপস’-এর মাধ্যমে দুর্ঘটনা, গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে রিপোর্ট করবেন। এসব তথ্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে ভাগাভাগি করে সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মহাপরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সর্বদা জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এবারের শারদীয় দুর্গাপূজায় গৃহীত সুসমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে পূজা উৎসব শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও আনন্দমুখর পরিবেশে উদযাপন সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী। একইসাথে, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দেশের সকল নাগরিকের সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর এই নিরাপত্তা কার্যক্রম শারদীয় দুর্গাপূজাকে নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণ ও সহযোগিতার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই মহোৎসব সফলভাবে উদযাপিত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
কেকে/ এমএস