রাজশাহীর তানোর-মুন্ডুমালা-আমনুরা সড়কের প্রশস্ততার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন সরু কালভার্টগুলো এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করছে শত শত যানবাহন, সামান্য অসতর্কতায় ঘটছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। গত ২৯ বছরে এই সড়কে ৩২০টির বেশি দুর্ঘটনায় দেড় ডজনের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে এবং আহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে।
প্রায় তিন দশক আগে কাঁচা থেকে ১০ ফিট প্রশস্ত পাকা সড়কে উন্নীত হওয়ার সময় এই সড়কের কালভার্টগুলোও ১০ ফিট চওড়া করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সড়কটি একাধিকবার সম্প্রসারিত হয়ে বর্তমানে ২০ ফিট প্রশস্ত হয়েছে। দুঃখজনকভাবে, সড়ক প্রশস্ত হলেও সেই তিন দশক আগের সরু কালভার্টগুলো অপরিবর্তীতই রয়ে গেছে। এই সরু কালভার্টগুলো দিয়েই বিগত ৩০ বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন, ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ এই সরু কালভার্টগুলো ভেঙে প্রশস্ত রাস্তার মাপে নতুন সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও এক যুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। বিশেষ করে তানোর থেকে মুন্ডুমালা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কের ৬টি এবং মুন্ডুমালা থেকে আমনুরা পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়কের ৩টি এতটাই সরু কালভার্ট, একটি বাস বা ট্রাক কালভার্টের উপর উঠলে পাশে পায়ে হেঁটে যাওয়ারও জায়গা থাকে না। বহু কালভার্টের সাইড ওয়াল ভেঙে রডগুলো দুমড়ে-মুচড়ে গেছে।
তানোর উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী, গত ২৯ বছরে এই সড়কে প্রায় ৩২০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে দেড় ডজনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং আহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে তানোর-আমনুরা রোডের দেবিপুর মোড় এলাকায় সরু কালভার্টের কাছে নির্মাণাধীন হিমাগারের মালামাল রাখার কারণে চলন্ত ট্রাকের নিচে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে তৎকালীন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাকসুদা খাতুন মারা যান। সর্বশেষ ২০২০ সালের শুরুতে যাত্রীবাহী বাস চিনাশো নামের স্থানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে উল্টে গিয়ে দুইজনের প্রাণহানি হয়। রাতের বেলায় আরও অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটলেও সেগুলোর কোনো তথ্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে নেই।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) তানোর অফিসের তথ্য মতে, ১৯৯২ সালে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) আমনুরার ধামধুম থেকে তানোর হয়ে রাজশাহী নগরীর বায়া পর্যন্ত প্রায় ৪৩ কিলোমিটার ১০ ফিট প্রশস্ত পাকা সড়ক নির্মাণ করে। ২০১২ সালে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ ৪৩ কিলোমিটার রাস্তাটি এলজিইডির কাছে হস্তান্তর করে। এরপর থেকে এলজিইডি পর্যায়ক্রমে মুন্ডুমালা থেকে বাগধানী পর্যন্ত সড়কটি ২০ ফিট পর্যন্ত সম্প্রসারণ করে। কিন্তু সর্বশেষ ২০২৫ সালেও ঝুঁকিপূর্ণ সরু কালভার্ট রেখেই আবারও সড়কটি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এতে স্থানীয় জনসাধারণ ও যানবাহন চালকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
রাজশাহী থেকে তানোর-মুন্ডমালায় চলাচলকারী একাধিক যানবাহন চালক জানান, রাস্তা থেকে কালভার্ট অনেক সরু হওয়ায় কালভার্টের উপর গাড়ি উঠলে আর কোনো জায়গা থাকে না। কালভার্টের কাছাকাছি গিয়ে সামনের গাড়ি থাকলে সেখানে কে আগে পার হবে তা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। রাতের বেলায় এই রাস্তায় গাড়ি চালাতে আরও বেশি সমস্যা হয়। চালকেরা গাড়ি পারাপারের সময় অনেকে ভারসাম্য হারিয়ে কালভার্টের সাইডওয়ালে ধাক্কা খায়, এতে নিজেরাই আহত বা নিহত হন।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) তানোর উপজেলা প্রকৌশলী নূর নাহার বলেন, ‘আমি এই উপজেলায় নতুন যোগ দিয়েছি।’
কালভার্ট-ব্রিজগুলো অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘কালভার্টগুলো সম্প্রসারণ করতে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নেব।’
কেকে/ এমএ