কক্সবাজারের চকরিয়ায় তৃণমূল পর্যায়ের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত পেয়েছেন চকরিয়া আবাসিক মহিলা কলেজ। চলতি শিক্ষাবর্ষে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিকৃত নবাগত শিক্ষার্থীদের বরণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফখর উদ্দিন ফরায়েজীর সভাপতিত্বে হলরুম মিলনায়তনে নবীন বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌরসভার প্রশাসক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান।
তিনি নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য বলেন, ‘আজকে যারা নবীন তাদের জন্য এ দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ন। এই কলেজের শিক্ষার মান ও পরীক্ষার ফলাফল অনেক ভালো। শহর অঞ্চলের কলেজে একজন শিক্ষার্থীর জন্য যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, ঠিক একইভাবে কোন ক্ষেত্রেই এখানে কম আছে বলে আমার মনে হয় না। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাশ করলে এবং অধ্যয়নে মনযোগী হলে অবশ্যই সাফলতা অর্জন করতে পারবে। দেশ প্রযুক্তিগত জ্ঞান উৎকর্ষে যে ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেভাবে নিজেকে তৈরি করতে হবে। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে উপযোগী করে গড়ে তোলার পাশাপাশি মেধা নির্ভর ও গুণগত মান সম্পন্ন শিক্ষা সুনিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জীবনে সফলতা এবং ভালো ফলাফলের জন্য সব সময় শিক্ষক ও বাবা মায়ের আনুগত্য মেনে এবং তাদের দোয়া নিয়ে পথ চলতে হবে। ভালো ফলাফলের মাধ্যমে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে হলে অবশ্যই প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মোবাইল আসক্তি কমাতে হবে। নিয়মিত ক্লাস করতে হবে এবং পড়াশোনায় গভীর মনোযোগ দিতে হবে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের ইভটিজিং ও বাল্যবিবাহ রোধ করতে সকলকে সচেতন হওয়া খুবই প্রয়োজন।’
কলেজ কর্তৃপক্ষকে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
কলেজের আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জমির উদ্দিনের সঞ্চালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ জুবাইদুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন কলেজের দাতা সদস্য মো. শাফায়াত হোসেন আরাফাত। বক্তব্য রাখেন কলেজের সহকারী অধ্যাপক বুলবুল জান্নাত, বাংলা বিভাগের প্রভাষক সায়েম মুনির। শিক্ষার্থীর মধ্যে বক্তব্য দেন শাহরিয়ার জন্নাত সাথী ও ফারহানা রসিদ কানিশা প্রমুখ।
ফখর উদ্দিন ফরায়েজী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা জিপিএ ৫ পাওয়ার প্রতিযোগিতায় না থেকে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিতে হবে। জ্ঞান অর্জন আর চরিত্র গঠনের মুল মাধ্যমে হচ্ছে সুশিক্ষা গ্রহন। সুশিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী নিজেকে প্রস্ফুটিত করার পাশাপাশি দেশ ও জাতির কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। প্রতিযোগিতা থাকা ভালো, তবে সবাইকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে তা নয়, প্রত্যেক পেশায় ভালো মানুষের প্রয়োজন। ভালো মানুষ এবং আলোকিত মানুষ হিসেবে যেন গড়ে উঠতে পারো, সে চেষ্টাটাই তোমাদের মাঝে থাকতে হবে। কলেজে পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের পাশাপাশি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিতে অবদান রেখে চলছেন। এই পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪০০ ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। আর এটাই প্রমাণ করে যে, কলেজের মান সম্মত শিক্ষা গ্রহণ ও ফলাফলের জন্য এ কলেজে আসছে। গরীব, অসহায় ও মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে আমরা সব সময় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। কারণ, তাদেরকে সুযোগ করে দিলে মেধার বিকাশ ঘটে।’
‘এ কলেজের ফলাফল অত্যন্ত সন্তোষজনক। শিক্ষকরা যথেষ্ট মেধাবী ও আন্তরিক। কলেজে সব বিষয়ে দক্ষ শিক্ষক রয়েছে। আশা রাখি, আগামীতেও তোমরা ভালো ফলাফল করবে। গভর্নিং বডি, শিক্ষকমণ্ডলী, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে এ প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে হবে।’
তিনি আগামীর সফলতায় কঠোর অধ্যবসায়ে নিজেদের সম্পৃক্ততা রাখার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।
কুরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। একাদশ শ্রেণিতে নতুন ভর্তিকৃত বিজ্ঞান বিভাগ, ব্যবসায় বিভাগ ও মানবিক বিভাগের কয়েক শত নবীন শিক্ষার্থীর প্রাণবন্ত উপস্থিতি অনুষ্ঠানে ভিন্নমাত্রা যোগ করে।
অনুষ্ঠানে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কেকে/ এমএ