জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ৫৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯টিতে প্রধান শিক্ষক না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদের কারণে সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। যার ফলে দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পাঠদানেও সমস্যা হচ্ছে। এই পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং অনেক অভিভাবকও সন্তুষ্ট নন।
জানা যায়, উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক না থাকায় শিক্ষাব্যবস্থায় এখন চরম সংকট। ৫৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯টিতেই নেই কোনো স্থায়ী প্রধান শিক্ষক। এতে প্রশাসনিক কার্যক্রম ও পাঠদান উভয়ই মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষক সংকটের কারণে সহকারী শিক্ষকদের ওপর অতিরিক্ত কাজের চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
কালাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে যায, উপজেলায় মোট ৫৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩৫টিতে প্রধান শিক্ষক আছেন। বাকি ১৯টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এর মধ্যে ১৯ জন সহকারী শিক্ষককে ‘চলতি দায়িত্ব’ অথবা ‘ভারপ্রাপ্ত’ হিসেবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক কার্যক্রম ও পাঠদান একসঙ্গে সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন এই শিক্ষকরা। প্রধান শিক্ষক পদে স্থায়ী নিয়োগ বা পদোন্নতি না হওয়ায় এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া, জাতীয়করণ হওয়া কিছু বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলায়ও এই সংকট আরও বেড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকলে কোন শৃঙ্খলা থাকে না। শিক্ষককরা নিজের ইচ্ছা মতো চলেন। বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। একজন শিক্ষককে একইসঙ্গে ক্লাস নেওয়া এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে, যা পাঠদানের মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এতে শিক্ষার্থীরাও মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’
বানদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম মাসুদ হেলালী বলেন, তার বিদ্যালয়ে ১৩৬ জন শিক্ষার্থী আছে। তিনি একইসঙ্গে শিক্ষকতা ও প্রশাসনিক কাজের দায়িত্ব পালন করছেন। এতে দুই দিকেই সমস্যা হচ্ছে।
বিয়ালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান জানান, আমাকে দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি প্রতিদিন ক্লাসও নিতে হচ্ছে। একটি কাজ করতে গেলে অন্যটি জমে যায়। এতে চরম চাপের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে।
কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি। শিক্ষক সংকটের কারণে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করার ফলে শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে ঠিকমতো পাঠদানে মনোনিবেশ করতে পারছেন না।’
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা প্রাথমিক ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা রাশিদুল আলম বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে নিয়োগ ও পদোন্নতি বন্ধ থাকায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি, খুবই শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।’
কেকে/ এমএ