স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন গঠন প্রশ্নে উত্তর মিলছে না। পতিত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ব্যাপক তথ্য কারসাজির পরিপ্রেক্ষিতে এমন সুপারিশ দিয়েছিল জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এটি বাস্তবায়নে বারবার তাগাদাও দেওয়া হচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে। কিন্তু স্পষ্ট কোন ধারণা দিচ্ছে না কোন পক্ষই।
এক্ষেত্রে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিন টাস্কফোর্স এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে কোন সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার বিবিএস এ মধ্যহ্নভোজে মিলিত হয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড.ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ এবং টাস্কফোর্সের সদস্যরা। এ সময় পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আখতারসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর আগারগাঁও এ মধ্যহ্ন ভোজে অংশ নেওয়া আগে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড.ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, আজকে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন আজ জমা দেবে না। তারা আমার কাছেই প্রতিবেদন জমা দেবে। তবে আজ আমি মূলত সবার সঙ্গে ডিনার করতেই এসেছি। এখনো কোন আলোচনা সভা করা হচ্ছে না। স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন গঠনের সুপারিশ টাস্কফোর্সের প্রতবেদনে থাকছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এখনো জানিনা প্রতিবেদনে কি আছে। হোসেন জিল্লুর এ বিষয়ে বলতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এমন প্রশ্ন করাটা এখন ঠিক নয়। কেননা আমরা যখন প্রতিবেদন জমা দেব সেখানেই সব থাকবে। এখনো বলতে পারছি না কি থাকছে। ইতোমধ্যেই প্রতিবেদনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা স্যার সুবিধাজনক সময় তারিখ দিলে আমরা প্রতিবেদনটি জমা দেব। এর বাইরে কিছু বলতে পারছি না।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে এর আগে জানানো হয়, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন বিষয়ে টাস্কফোর্স কাজ করছে। তারা যে সুপারিশ দেবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অর্থাৎ টাস্কফোর্সের সুপারিশের উপর নির্ভর করছে স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন গঠন হবে কিনা।
এদিকে মধ্যহ্নভোজে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা জানান, আগামী ১০ সেপ্টেম্বর টাস্কফোর্স তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে পরিকল্পনা উপদেষ্টার কাছে। তবে স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন গঠনের রুপরেখা বা সুপারিশ প্রতিবেদনে থাকবে কিনা এ নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। তবে আনুষাঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে কথা হয়েছে খাবার সময়।
সূত্র জানায়, সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রশাসনিক সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) একটি স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশনে রূপান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। অথচ সেটি বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। গত ১৬ জুন প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সহজে ও আশু বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে আটটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে এই বিষয়টিকে অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এরপরও সংশ্লিষ্ট বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের উদ্যোগ থেমে যায় টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনের অপেক্ষায়।
সূত্র জানায়, গত ১৯ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে কমিশন বাস্তবায়নের নির্দেশনা সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়। সেই চিঠি পাওয়ার প্রায় একমাস পর পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এ সংস্কারের আইনি কাঠামো তৈরির দায়িত্ব বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) দিয়ে একটি চিঠি দেয়। বিবিএস গত ২০ এপ্রিল একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করে। তবে ওই কমিটির কার্যপরিধি স্পষ্ট নয় এবং কোনো সময়সীমা নির্ধারিত হয়নি। কমিটি গঠনের দীর্ঘ দিন পেরিয়ে গেলেও ওয়ার্কিং কমিটি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি বলে জানা গেছে। সরকারের এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হবে কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, একটি স্বাধীন ও কার্যকর পরিসংখ্যান কমিশন গঠন হলে দেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, নির্ভরযোগ্যতা ও আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত হবে।
কেকে/এজে