হযরত ইমাম মেহেদি (আ.) দাবিকারী রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পাক দরবার শরীফের পীর নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের কবর ১২ ফুট উচু থেকে নিচু (সমতল) করার দাবি জানানো হয়েছে।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজবাড়ী প্রেস ক্লাবে জেলা ইমান আকিদা রক্ষা কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আগামীকালের মধ্যে নুরাল পাগলের কবর সমতল না করলে শুক্রবার বাদ জুম্মা জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ এবং পরবর্তী শুক্রবার রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর ও মাগুরাসহ আশাপাশের জেলা থেকে ‘মার্চ ফর গোয়ালন্দ’র হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নুরাল পাগলকে ভন্ডপীর দাবি করে তার আস্তানায় অনৈতিক কার্যকলাপ, কালিমা ও আযান বিকৃতি, ইমাম মেহেদির নামে দরবার শরীফ এবং তার বড় ছেলের বিরুদ্ধে মুসলমানদের ধর্মান্তরিত করে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করানোর অভিযোগ করা হয় ।
এছাড়াও অভিযোগ করা হয়, ভন্ড নুরাল পাগল তার মৃত্যুর পূর্বে কাবা শরীফের আদলে ১২ ফুট উচু বেদি তৈরি করে এবং মৃত্যুর পর ওই বেদিতে তার কবর দেওয়া হয় এবং কবরটি যথাযথ নিয়মে দেওয়া হয় নাই। কবরটি হুবুহু কাবার আদলে করা হয়েছে; যা ঈমান বিধ্বংসী এবং ইসলাম ও শরিয়ত পরিপন্থি কাজ। পরবর্তী আন্দোলনের প্রেক্ষিতে কবরের রঙ ও ইমাম মেহেদি দরবার শরীফের নাম অপসাররণ করলেও কবর নিচু করে নাই।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রাজবাড়ী জেলা ইমান আকিদা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা ইমাম কমিটির সভাপতি হাফেজ মাওলানা মো. ইলিয়াস মোল্লা।
তিনি বলেন, ‘গোয়ালন্দে দীর্ঘ দিন ধরে তথাকথিত ভন্ড পীর ইমাম মেহেদির দাবিদার নুরাল পাগলের আবির্ভাব হয় আশির দশকে। তার এমন কিছু কার্যকলাপ আছে- যেগুলো ঈমান বিধ্বংসী। যেটা মুসলমানদের কোরআন, ঈমান, আল্লাহর অস্তিত্ব ও রাসুলের উপর আঘাত এনেছে। একজন সাধারণ মুসলমান হিসেবে এটা সহ্য করা সম্ভব নয়, যদি তার ঈমান থাকে। তার মৃত্যুর পূর্বে তিনি কাবা শরীফের আদলে ১২ ফুট উঁচু বেদি তৈরি করে রেখেছেন। মত্যুর পর ওই ১২ ফুট উপরে তার কবর দেওয়া হয়েছে। কবরের দেয়াল কাবার রঙে রঙ ও বর্ডার দিয়ে হুবহু কাবার আদলে করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোরআন সুন্নাহ বিরোধী ১২ ফুট উঁচুতে কবর রাজবাড়ীর তৌহিদী জনতা মেনে নেবে না। আগামীকালের মধ্যে এই খবর নিচু করতে হবে এবং চিরদিনের মত ইমাম মেহেদির দাবিদার তার অনুসারীরা করতে পারবে না। তার ছেলে মুসলমানদেরকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মান্তরিত করছে, সেগুলোতে থেকে ফিরে আসতে হবে। সেই সাথে ভন্ড নুরালের কবর পাশের কবরস্থানে স্থান্তরিত করতে হবে। এখানে কবর থাকলে আবারও শিরিক হবে।’
ইলিয়াস মোল্লা বলেন, ‘আগামীকালের মধ্যে যদি দাবি আদায় না হয়, তাহলে আগামী শুক্রবার আমাদের জেলাসহ উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল এবং পরবর্তী শুক্রবারে রাজবাড়ীসহ পার্শ্ববর্তী জেলা ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, মাগুরা ও মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা সফর করে সারাদেশ থেকে মার্চ ফর গোয়ালন্দ কর্মসূচি পালন করা হবে। তখন আর কোন বাঁধা মেনে নেওয়া না। তখন ভন্ড নুরালের আস্তানাসহ কবর গুড়িয়ে দেওয়া হবে। সেই সাথে ভন্ডের পক্ষে অবস্থানকারীদেরও উচিত জবাব দেওয়া হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে জেলা জামায়াতে ইসলামী আমীর নুরুল ইসলাম, ডা. আবুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ চৌধুরী আহসানুল করিম হিটু, ইসলামী আন্দোলন জেলা শাখার সেক্রেটারি আরিফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গোয়ালন্দ পাক দরবারের পীর নুরাল হক নুরাল পাগলের মৃত্যুর পর তার প্রতিষ্ঠিত গোয়ালন্দ দরবার শরীফের ভেতরে কাবা শরীফের আদলে রঙ করা মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচু বেদিতে দাফন করা হয়। এরপর থেকে কবর নিচু, রঙ পরিবর্তন ও ইমাম মেহেদি দরবার শরীফ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণের দাবি তোলেন তৌহিদী জনতাসহ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
কেকে/এমএ