চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে সরকারি জায়গা দখলের বিরুদ্ধে মানবন্ধন নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের তিন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
সোমবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের হেঁয়াকো বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষ উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যদের হস্তক্ষেপে অবশেষে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বর্তমানে উভয়পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বাজারজুড়ে।
আহত দলের কর্মীরা হলেন, মো. বাবুল (৬০), আব্দুল মালেক অনু (৩৫), মো. শরিফ (২৮)। তারা স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের বিভিন্ন পদে দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানা যায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ই্উএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি আপাতত শান্ত। আমরা উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত আইনশৃংখলা বাহিনী মোতায়েন করেছি। পুলিশ ও বিজিবির পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনও মাঠে রয়েছে।’
বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা দুইটি ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন উত্তরজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সরোয়ার আলমগীর। অন্যপক্ষের নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কর্ণেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহার।
সোমবার দুপুর সাড়ে বারটার দিকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কর্ণেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহার পক্ষের স্থানীয় নেতাকর্মীরা সরকারি জায়গা দখল-বেদখল নিয়ে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে একটি মানববন্ধন করেন। এতে নেতৃত্ব দেন উপজেলার ভূজপুর থানা যুবদলের আহ্বায়ক মো. নুরুল আমীন। এ সময় নেতাকর্মীদের সড়ক অবরোধের ফলে সড়কের দু’পাশে শতাধিক গাড়ি আটকা পড়ে। খবর পেয়ে ফটিকছড়ি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নজরুল ইসলাম সেখানে উপস্থিত হলে তার আশ্বাসে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।
তবে, প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল ত্যাগের কিছুক্ষণের মধ্যেই জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সরওয়ার আলমগীর সমর্থিত বিএনপি নেতা নাছির উদ্দিন বিপ্লবের নেতৃত্বে বেশকিছু নেতাকর্মীর সাথে নুরুল আমীনের পক্ষের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি হন। এময় দুই পক্ষের মাঝে তুমুল সংঘর্ষ বাঁধে। এতে দুই পক্ষের মারামারিতে তিন নেতাকর্মী আহত হন। পরবর্তীতে থেমে থেমে নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পুরো বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেন। এ সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ ও বিজিবির উপস্থিতি থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের কিছুটা বেগ পেতে হয়। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)’র উপস্থিতিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও বিজিবি সদস্য ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে অবশেষে বিকেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ভুজপুর থানা যুবদলের আহ্বায়ক মো. নুরুল আমীন বলেন, ‘আমরা শান্তিতে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মানবনন্ধন করছিলাম। কিন্তু কিছু দলীয় চাঁদাবাজ আমাদের বাঁধা দিতে চেষ্টা করেছেন। হেঁয়াকো এলাকায় বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কারোও চাঁদাবাজি বরদাশত করা হবে না। সে যেই হোক তাকে প্রতিরোধ আর প্রতিহত করা হবে।’
বিএনপি নেতা নাছির উদ্দিন বিপ্লব বলেন, ‘এসব আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। ওই ধরণের কোনো চাঁদাবাজি বা অপরাধ কার্যক্রমে আমি জড়িত নই। এসব আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির টহল জোরদার রয়েছে। আশা করছি দলের নেতৃস্থানীয়রা বিষয়টির ফয়সালা করবেন। দু’পক্ষের বিরাজমান পরিস্থিতি সহসাই শান্ত হবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
কেকে/ এমএস