রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫,
২৭ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা      নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা      অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতিনিধি দল      ইতালির পথে প্রধান উপদেষ্টা      যুদ্ধবিরতির পর গাজায় একদিনে ফিরেছেন ৫ লাখ ফিলিস্তিনি      
জাতীয়
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার ৭ প্রস্তাব
খোলা কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫, ২:৫৪ পিএম আপডেট: ২৫.০৮.২০২৫ ৪:৫২ পিএম
সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সদয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে ৭ দফা প্রস্তাবও দিয়েছেন।

সোমবার (২৫ আগস্ট) সকালে কক্সবাজারে চলমান ‘রোহিঙ্গা বিষয়ক অংশীজন সংলাপ’-এ দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ২০১৭ সালের এই দিনে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে নিজের জীবন বাঁচাতে এ দেশে চলে আসে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এখনও আমরা নতুন করে রোহিঙ্গাদের আগমন দেখতে পাচ্ছি প্রতিদিন। এ রকম একটা দিনে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ইতিহাসের সঠিক পথে অবস্থান নেওয়া এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীকে জাতিগত নিধন বন্ধ করানো।

তিনি বলেন, এটা সাংঘাতিক রকমের ভুল হয়ে যাবে যদি আমরা রাখাইন সম্প্রদায়ের শেষ চিহ্নটুকু দেখার জন্য অপেক্ষা করি। আমরা তা করতে দিতে পারি না। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিশ্রুতি আছে। যখন গত মার্চে জাতিসংঘ মহাসচিব এসেছিলেন এখানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কিছু সময় কাটাতে, তিনি অন্য সবার মতো উপবাস ছিলেন এবং প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করেন। এর মাধ্যমে তাদের একটা আশা দিয়েছিলেন যে, বিশ্ব তাদের পাশে আছে এবং তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে সাহায্য করবে এবং ঈদুল ফিতরের মতো ধর্মীয় উৎসব নিজ দেশে উদযাপন করতে পারবে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের চোখে এখনও ভীতি দেখি, যখন তারা তাদের ওপর হয়ে যাওয়া অবর্ণনীয় ঘটনাগুলো আমাদের সামনে তুলে ধরেন। ২০১৭ এবং তারও আগে বাংলাদেশ মানবিক কারণে তাদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের এমন পরিস্থিতিতে আমরা চুপচাপ বসে থাকতে পারি না। আন্তর্জাতিক মহলের এখানে আগের চেয়েও বেশি ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। আমি আন্তর্জাতিক সংস্থা, অংশীজন, দাতাসংস্থাগুলোর অব্যাহত প্রচেষ্টার প্রশংসা করি। আপনাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা রোহিঙ্গাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি যতদিন না তারা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। যে কারণে কক্সবাজার এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্পে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি বছর ২২ হাজার শিশু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জন্ম নিচ্ছে। ৫ লাখের কম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বর্তমানে মিয়ানমারে অবস্থান করছে। এই চিত্র প্রমাণ করে যে প্রতিনিয়ত নিপীড়নের কারণে রোহিঙ্গারা সে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে। গত ৮ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে এই কক্সবাজার অঞ্চলের মানুষ উল্লেখযোগ্য ত্যাগ স্বীকার করেছে। আমাদের অর্থনীতি, সম্পদ, পরিবেশ, বাস্তুসংস্থান, সমাজ এবং সুশাসনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।

তিনি বলেন, নানা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ সম্পদকে আর ব্যবহার করার কোনো সুযোগ দেখছি না। রোহিঙ্গা ইস্যু এবং টেকসই সমাধান বৈশ্বিক এজেন্ডায় জিইয়ে রাখতে হবে যতদিন না তারা নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত কাজ করছে। এই সংলাপ রোহিঙ্গাদের আওয়াজ আরও জোরালো করছে এবং দ্রুত, টেকসই, নিরাপদ প্রত্যাবাসনের রোডম্যাপ তৈরি করছে। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান শুধু বাংলাদেশের একার কাজ নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এখানে এগিয়ে আসতে হবে।

মিয়ানমারে নিপীড়িত হয়ে বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গাদের অনিশ্চিত যাত্রার আট বছর পূর্ণ হওয়ার দিনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সংকট সমাধানে সাত দফা কর্মপরিকল্পনা প্রস্তাব করেন প্রধান উপদেষ্টা।

কর্মপরিকল্পনাগুলো হলো- প্রথমত, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নিরাপদে ফিরে যেতে হবে। এ জন্য আমরা সবাইকে আহ্বান জানাব। তাদের সেচ্ছায়, নিরাপদ এবং টেকসই প্রত্যাবাসনে একটি বাস্তব রোডম্যাপ যত দ্রুত সম্ভব তৈরি করুন। আর সময় নষ্ট না করে এখন কাজ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, জীবন রক্ষাকারী কাজ চলমান রাখতে দাতাসংস্থা এবং আন্তর্জাতিক অংশীজনদের অপরিমিত অবদান এখানে প্রয়োজন। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাকে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার। একই সময়ে আমরা অংশীজনদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, ভবিষ্যতের জন্য পর্যাপ্ত ও টেকসই অর্থায়ন করার পদক্ষেপ নিতে।

তৃতীয়ত, রোহিঙ্গাদের প্রতি সব ধরনের নিপীড়ন এই মুহূর্তে বন্ধ করতে হবে। আমরা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এবং আরাকান আর্মির প্রতি আহ্বান জানাই রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা এবং জীবিকা নিশ্চিত করার। আর কোনও রোহিঙ্গা যাতে বাংলাদেশে না আসে তা মিয়ানমারকে নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজেদের বাড়িতে ফিরতে দিতে হবে।

চতুর্থত, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সহিংসতা বন্ধে, জাতিগত নিপীড়ন রোধে পরামর্শ কিংবা সংলাপের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে। আমরা মিয়ানমার সরকার এবং রাখাইন কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাই রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিতে, সেচ্ছায় নিরাপদ প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার।

পঞ্চমত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা বিশেষ করে আসিয়ানকে রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। আপনাদের সবার সহযোগিতা এই সংকটের সমাপ্তি টানতে পারে। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সচল হওয়ার আহ্বান জানাই।

ষষ্ঠত, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক অংশীজনদের অবশ্যই জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

সপ্তম, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানাই ন্যায়বিচার, দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে এবং গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে। এখনই সময় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার।

কক্সবাজারের এই সম্মেলন থেকে প্রাপ্তি, জাতিসংঘের সদর দপ্তরে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠাতব্য রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে তাৎপর্য বহন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

অধিবেশনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বক্তব্য রাখেন।

কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন দেশের শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, বৈশ্বিক সংস্থা ও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করেন প্রধান উপদেষ্টা। বেলা ১১টায় সড়কপথে ইনানীর সম্মেলনস্থল হোটেল বে-ওয়াচে পৌঁছায় তার গাড়িবহর।

রোববার (২৪ আগস্ট) বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে শুরু হওয়া সম্মেলনটির দেশি-বিদেশি অংশগ্রহণকারীরা শেষ দিন ২৬ আগস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন বলে জানা গেছে।

কেকে/এআর
আরও সংবাদ   বিষয়:  প্রধান উপদেষ্টা   ড. মুহাম্মদ ইউনূস   রোহিঙ্গা সংকট   ৭ প্রস্তাব  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ঘুমধুমে মাইন বিস্ফোরণে বিজিবি সদস্যের পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন
বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল
লালপুরে পদ্মা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের ব্লক ধসে ভাঙন আতঙ্ক
মৌলভীবাজারে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন
ভেড়ামারায় জাপান বাংলাদেশ নিহোঙ্গো সেন্টারে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান

সর্বাধিক পঠিত

নারায়ণগঞ্জে টাইফয়েড টিকা প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন
বান্দরবানে শুরু হয়েছে টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি
নেতা নির্বাচনে ইসলামের নির্দেশনা
সমতা আইনেই, বাস্তবে নয়
অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতিনিধি দল

জাতীয়- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close