বাগেরহাটের ফকিরহাটে নিজের জীবনের কষ্টার্জিত জমি স্ত্রীকে দলিল করে দিয়ে বিপাকে পড়েছেন মো. আবুল বাশার নামের এক ব্যবসায়ী। স্ত্রী, একমাত্র মেয়ে ও জামাতার অত্যাচারে নিজ বাড়ি ছেড়ে পথে পথে ঘুরছেন তিনি। এমনকি স্ত্রীর বিরুদ্ধে নিজেকে মারধরেরও অভিযোগ করেছেন আবুল বাশার। স্ত্রীকে লিখে দেওয়া জমি ফেরত এবং ন্যায় বিচারের দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।
মো. আবুল বাশার ফকিরহাট উপজেলার লখপুর ইউনিয়নের লখপুর গ্রামের মৃত আব্দুস সোহবানের ছেলে।
ভুক্তভোগী মো. আবুল বাশার বলেন, সারাজীবন কষ্ট করে লখপুর গ্রামে সাড়ে ১২ শতক জমি ক্রয় করি। পরে ওই জমিতে বাড়িও করেছি। একমাত্র মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল আমার। ২০১২ সালের ২৭ মে আমার স্ত্রী কৌশলে আমার কাছ থেকে বাড়িসহ জমি দানপত্র দলিল করে নেয়। পরবর্তীতে লখপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আমার মেয়েকে একটি দোকান ক্রয় করে দেই। ২০১৯-২০ সালের দিকে আমার স্ত্রী নাসরিন বেগম, আমার মেয়ে নুসরাত তামান্না ও জামাতা সেনা সদস্য আবু ইউসুফ আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমাকে বাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। আমার বাড়ি ভাড়াও আমাকে তুলতে দেয় না। নিজের জীবন বাঁচাতে আমি আমার জমি ফেরত চাই। জমি ফেরত চাইলে, অত্যাচার আরো বেড়ে যায়।
এর অংশ হিসেবে ২০২৪ সালের গত ২৭ নভেম্বরে আমার স্ত্রী ও জামাতাসহ কয়েকজন বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, ধাক্কাধাক্কি করে ঘর থেকে বের করে দেয় এবং প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। পরে তারা বসতবাড়ির প্রধান ফটকে ডাবল তালা মেরে চলে যায়। পরের দিন ২৮ নভেম্বর ফকিরহাট মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও বিষয়টি ধামা চাপা পরে যায়।
ভুক্তভোগী আবুল বাশার আরো বলেন, আমার সব থাকতেও আমি বাড়ি ছাড়া। আমার স্ত্রী ও মেয়ে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। বাড়ি থাকলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। জামাইও বিভিন্ন লোক দিয়ে মুঠোফোনে হুমকি দিচ্ছে। এই অবস্থায় নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি। আমি যেকোন মূল্যে আমার জমি ফেরত চাই এবং নিজের বসত বাড়িতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই ব্যবসায়ী।
স্থানীয় জয়নাল আবেদিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, আবুল বাশার খুবই কষ্ট করে এই জমি ক্রয় ও বাড়ি নির্মাণ করেছেন। কিন্তু শেষ বয়সে এসে স্ত্রীকে জমি লিখে দিয়ে খুবই বিপদে পেড়েছেন মানুষটি। সে এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমরা চাই সামাজিক, ধর্মীয় ও আইনগতভাবে আবুল বাশারকে জমি ফেরত দেওয়া হোক। তিনিও যাতে তার স্ত্রীকে নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারেন আমরা তাই চাই।
মো. আওলাতুল নামের এক ব্যক্তি বলেন, নিজের জমি-বাড়ি থাকতে আজ বৃদ্ধ বয়সে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় আবুল বাশার। এটা খুবই অন্যায়। তার স্ত্রী, মেয়ে, জামাই এবং স্থানীয় সবাই মিলে আবুল বাশারকে শান্তিতে বসবাস করার ব্যবস্থা করে দেওয়া উচিত। তা না হলে তো রাস্তায় পড়ে মরে থাকবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল বাশারের মেয়ে নুসরাত তাসনিম তামান্না বলেন, আমার বাবা এবং মা আলাদা থাকে এটা আমরা চাই না। জমি মায়ের নামে থাকলেও, ভোগদখল করেন বাবা। আর আমার নামে যে দোকান কিনে দিয়েছিল, তা আমি বাবাকে ফেরত দিয়েছি। আমরা চাই আমার বাবা-মা এক সাথে থাকুক।
আবুল বাশারের স্ত্রী নাসরিন বেগম বলেন, আমি আমার স্বামীকে বার-বার বুঝিয়েছি। তাকে আমার সাথে মিলে-মিশে থাকার অনুরোধ করছি। কিন্তু তা না করে তিনি মানুষের কথা শুনে সে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। আমি যদি জমি তাকে লিখে দেই, তাহলে সে আমার জীবনের কোন নিরাপত্তা থাকবে না। তাই আমি জমি লিখে দিব না।
কেকে/এআর