বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি হুহু করে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দ্বিতীয় দফায় বন্যার কবলে পড়েছে তিস্তার বাম তীরের জেলা লালমনিরহাট।
রোববার (৩ আগস্ট) দুপুর ১২টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমি ১২০ মিটার। যা বিপদসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নদীপাড়ের মানুষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কয়েক দিন ধরে উজানে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় উজান থেকে ধেয়ে আসছে পানি। একই সঙ্গে টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে তিস্তা নদীতে পানি প্রবাহ বেড়ে গেছে। গত কয়েক দিন ধরে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হয়। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিপদসীমা অতিক্রম করে এবং ওই দিন রাত ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বন্যার কবলে পড়ে লালমনিরহাটের নদী তীরবর্তী এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়ে হাজার হাজার পরিবার। এর একদিন পরেই পানি কমে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে তিস্তাপাড়ে।
প্রথম দফায় বন্যার ধকল কাটতে না কাটতেই রোববার (৩ আগস্ট) সকাল থেকে বাড়তে থাকে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ। সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় বিপদসীমা বরাবরে। মুহূর্তে বাড়তে থাকে পানির চাপ। দুপুর ১২টায় বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ডালিয়া পয়েন্টে।
ফলে তিস্তা নদীর তীরবর্তি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে দ্বিতীয় দফায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তিস্তাপাড়ের হাজার হাজার পরিবার। ডুবে গেছে তিস্তা চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ফসলের মাঠ। চরাঞ্চলের সড়ক পথের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। যোগাযোগের মাধ্যম হয়েছে নৌকা আর ভেলা। সৃষ্ঠ বন্যায় ডুবে যেতে বসেছে আমন ধানসহ নানা ফসলের খেত। পুকুর ডুবে যাওয়ায় ভেসে যাচ্ছে চাষিদের মাছ।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, রোববার দুপুর ১২টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদী তীরবর্তি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। নদী তীরবর্তি অঞ্চলের জনগনকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।
গড্ডিমারী ইউনিয়নের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি ও উজান থেকে প্রচুর পানি আসছে। ইতোমধ্যে নিচু এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। নিচু এলাকার পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তা ঘাট পানিতে ডুবে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। রোববার দুপুর ১২টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে। তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। তাই এসব অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, তিস্তাপাড় প্লাবিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি আরো দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে। গেল বন্যায় বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবারসহ চাল বিতরণ করা হয়েছে। চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে জেলা প্রশাসন। বন্যা কবলিতদের তালিকা করে পুনরায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে।
কেকে/এএস