গত ৮ দিন নির্ধারিত সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় জমি নিবন্ধনের প্রক্রিয়ায় মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ জমি ক্রেতা ও বিক্রেতা।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকালে কাপাসিয়া সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, দলিল লেখক সমিতির লোকজন বসে আছেন। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষজনকে রেজিস্ট্রি করতে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে, আবার কাউকে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
উপজেলার উত্তর খামের গ্রামের আবুল হাসেমের স্ত্রী রাজিয়া খাতুন (৫০) বলেন, ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অর্থের অভাবে জমি বিক্রি করেছি। জমি বিক্রির টাকা দিয়ে চিকিৎসা থেরাপি নেব। গত সাত দিন ধরে প্রতিদিনই অফিসে এসে জমি হস্তান্তর করতে পারছি না। শুনেছি এখানে সাব রেজিস্টার নাই এইজন্য আমার জমি রেজিস্ট্রি হয় না।
কাপাসিয়ার আড়ালিয়া ঘোষের কান্দি গ্রামের তোরাব আলীর ছেলে আজিজুল হক বলেন, বিদেশের ফ্লাইট এর তারিখ নির্ধারণ হয়েছে। যে কোনো প্রকারে আমাকে বিদেশ যেতে হলে টাকা পরিশোধ করতে হবে। টাকা না দিলে আমাকে টিকেট দিচ্ছে না। জমি রেজিস্ট্রি করতে না পারলে আমার বিদেশ যাওয়া বন্ধ হয়ে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
কাপাসিয়ার সাব রেজিস্ট্রার অফিস সহকারী নুরুল ইসলাম খোলা কাগজকে বলেন, গত ২৩ জুলাই থেকে সাব রেজিস্ট্রার অফিসে আসেন না। কি কারণে আসেন না আমি বিস্তারিত বলতে পারছি না। তবে অনেক মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ টা জমি রেজিস্ট্রি হয়। রেজিস্ট্রি না হওয়ায় রাজস্ব আদায় হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্দিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার পক্ষে সব কাজ একযোগে সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে নিবন্ধন কার্যক্রমে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতা। ফলে জমি কেনাবেচা কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা, যা শুধু ব্যক্তিগত ভোগান্তি নয়, রাজস্ব আদায়েও প্রভাব ফেলছে।
উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দলিল লেখক বদরুজ্জামান বাদল খোলা কাগজকে বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে জমি সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ বন্ধ রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ জমি ক্রয় বিক্রয় করতে না পেড়ে মারাত্মক অসুবিধায় পড়েছে।
দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন খোলা কাগজকে বলেন, এভাবে দিনের পর দিন রেজিস্ট্রার না আসলে হাজারো মানুষের সমস্যা নিয়ে বাড়ি যাবে। কবে আসবে এইটাও অনিশ্চিত হয়ে গেছে।
সাব রেজিস্টার্ড ওসমান গনি মন্ডলকে একাধিকবার ফোন দিলে ফোন ধরেননি এসএমএস পাঠিয়ে জানতে চাইলেও কোনো রিপ্লাই দেননি।
গাজীপুর জেলা রেজিস্ট্রার মো. মিজানুর রহমান খোলা কাগজকে বলেন, কাপাসিয়া সাব রেজিস্টার ওসমান গনি মন্ডলের গত ২৩ জুলাই চাকরির মেয়াদ শেষ হয়। পরে তিনি মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় আরো এক বৎসর চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর দাবিতে মহামান্য হাইকোর্টে রিট করেন। মহামান্য হাইকোর্ট তার আবেদন মঞ্জুর করেন। তবে সরকার পক্ষ চেম্বার জজ আদালত আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। এ বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত। তবে জন দুর্ভোগ কমাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেকে/ এমএস