বর্ষাকে ঘিরে বৃহৎ চলনবিলাঞ্চলে ডিঙ্গি নৌকা তৈরী ও কেনাবেচার হিড়িক পড়েছে। বর্ষায় এ অঞ্চলে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এবং কৃষক ও জেলেদের মাছ ধরার প্রধান উপকরণ হল ডিঙ্গি নৌকা। এই নৌকা তৈরি করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন কাঠমিস্ত্রি ও ব্যবসায়ীরা। দাম বেশি হলেও নদী এবং বিলপাড়ের মানুষদের কাছে এ নৌকার কদর কমেনি।
এদিকে চলনবিল অধ্যুষিত গুরুদাসপুরের বুক চিয়ে বয়ে যাওয়া আত্রাই ও নন্দকুজা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকা। ফলে নৌকা ক্রয়ে সুফল পাচ্ছেন পানিবন্দি মানুষ। বর্তমানে চলনবিলাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ নৌকার হাট চাঁচকৈড়ে পসড়া সাজিয়ে চলছে ডিঙ্গি নৌকা কেনাবেচার ধুম। ব্যবসায়ী-মহাজনরা আগে থেকেই নৌকা তৈরীর প্রয়োজনীয় কাঠ সংগ্রহ করে রেখেছেন।
চাঁচকৈড় হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটের দক্ষিনাংশে ২৫ থেকে ৩০টি কারখানায় ডিঙ্গি নৌকা তৈরীর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। এ হাটে সপ্তাহের দুদিন শনি ও মঙ্গলবার শতশত নৌকা বিক্রি হয়। কারখানার সামনেই বিক্রির জন্য একের ওপর এক সাজিয়ে রাখা নৌকা। নৌকা কেনাবেচায় নিয়োজিত ব্যবসায়ী, মিস্ত্রি ও ক্রেতার হাকডাকে মুখরিত হাট।
নৌকা কিনতে আসা গুরুদাসপুরের পিপলা গ্রামের আলেক, পার্শ্ববর্তী সিংড়ার ডাহিয়া গ্রামের রুবেল, তাড়াশের কুন্দইল গ্রামের রেজা জানান, বর্ষা মৌসুমে তাদের হাতে কোনো কাজ থাকে না। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করতে হয় নৌকায়। মাছ ধরে বাড়তি আয় ও পারাপারের জন্য তারা ডিঙি নৌকা কিনতে এসেছেন। তবে গত বছরে তুলনায় এবার নৌকার দাম বেশি বলে জানান তারা।
নৌকার কারিগর পরিতোষ, রায়হান, আব্দুল মজিদ, ফজল, মাসুদ ও ফজলু মোল্লা বলেন- বর্ষা মৌসুমে নৌকা তৈরী করে তাদের সংসার চলে। আকারভেদে প্রতিটি ডিঙ্গি নৌকা তৈরী করে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা করে পারিশ্রমিক পান। এ হাটে শিমুল, আম, মেহগিনি, ইউক্যালিপটাস কাঠের নৌকার কদর বেশি।
ব্যবসায়ী আলাল উদ্দিন, শিবলু ফকির, আনছু ফকির বলেন- পানি বাড়ার সাথে সাথে নৌকার চাহিদা বাড়ছে। ১০-১২ হাত নৌকা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। আর ১২-১৫ হাত নৌকা ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। নৌকার দু’পাশে লোহার পাতের (প্লেনশীট) ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে নৌকাপ্রতি। প্রতিটি নৌকা ৫০০ টাকা লাভে তারা বিক্রি করছেন। গত বছরের তুলনায় শ্রমিক, কাঠ ও নৌকা তৈরীর প্লেনশীটের দাম এবার বেশি। এ কারনে নৌকাও বাড়তি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
হাট ইজারাদার আনজাম ও ফারুক হোসেন বলেন, চলনবিলজুড়ে চাঁচকৈড় হাটের নৌকার সুনাম রয়েছে। হাটের দু’দিন গড়ে ১০০ থেকে ১২০টি নৌকা বিক্রি হয়। প্রতিদিন বাজারেও কমবেশি নৌকা বিক্রি হয়।
কেকে/ এমএস