৯ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় নিয়মিত বেতন-ভাতা তোলার অভিযোগ উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুরাইয়া আক্তার লাভলীর বিরুদ্ধে। এতে বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক ও স্থানীয়দের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্কুলের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সুরাইয়া আক্তার দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের বদান্যতায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে। নামমাত্র ক্লাশ নিয়ে গল্পগুজব করে সময় পার করতেন। অনেক সময় ক্লাশও নিতেন না। প্রধান শিক্ষকের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহসও পেতো না। ছাত্রীদের দাবিয়ে রাখা হতো।
সহকারী শিক্ষিকা লাভলী ও বর্তমান প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলামকে নিয়ে এলাকায় রয়েছে নানান মুখরোচক গল্প।যদিও এর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর বিদ্যালয়টির শত শত ছাত্রী শিক্ষিকা লাভলীর বিরুদ্ধে দিনের পর দিন তার অতীতের বিভিন্ন অভিযোগ, দুর্ব্যবহারের বিরুদ্ধে মিছিল, মানববন্ধন ও ক্লাশবর্জন করতে থাকে। অবশেষে গত বছরের ৯ আগস্টের পর থেকে স্কুলে আসতে পারেননি তিনি।
তৎকালীন ইউএনও আবুল মনসুর তদন্ত কমিটি গঠন করেন। যা এখনো বাস্তবায়নের অপেক্ষায় বলে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে জানা গেছে।
তিনি স্কুলে না আসলেও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন। গত একবছরে উৎসব ভাতাসহ চার লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করেছেন সুরাইয়া আক্তার লাভলী—এবিষয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম ফারুক বলেন, তার বিরুদ্ধে (সুরাইয়া আক্তার) তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। ছাত্রীরা তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছিল তার সিংহভাগই সত্য বলে প্রতীয়মাণ হয়েছে। তিনি আগে (চব্বিশের ৯ আগস্টের আগে) বিদ্যালয়ে আসতেন ঠিকই, কিন্তু ক্লাশ নিতেন না। ছাত্রীদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করতেন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট নেতিবাচক।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জুলফিকার হোসেন মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি আমি জানতাম না।বিদ্যালয়ে ৬ মাস না এলেই বেতন ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল। তিনি কেনো অভিযুক্ত সুরাইয়া আক্তার লাভলীর বেতন-ভাতা দিলেন, সেটি খতিয়ে দেখা হবে।
আজ বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানলাম। তদন্ত শেষ, প্রকাশ ও সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত তো অভিযুক্ত বেতন পাওয়ার কথা না। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে মন্তব্য জানাতে অভিযুক্ত শিক্ষক সুরাইয়া আক্তার লাভলীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘৯ আগস্টের (২০২৪ সাল) পর থেকে সুরাইয়া আক্তার লাভলী বিদ্যালয়ে আসেন না। তবে বেতন ভাতা পান কীভাবে—সেটি উপর মহলে প্রশ্ন করুন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট খুবই ভালো। তাকে প্রশাসন স্কুলে আসতে না দেয়াটা ঠিক করছে না। তার মতো ভাল শিক্ষক আমি খুবই কম দেখেছি।’
কেকে/এজে