ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় চিরবিদায় নেওয়া সাহসী শিক্ষিকা মাহরীন চৌধুরীর কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বিজিবি।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে বিজিবি রংপুর রিজিয়নের আয়োজনে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি চৌধুরীপাড়া গ্রামে এ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এসময় বিজিবির রংপুর, ঠাকুরগাঁও এবং নীলফামারীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ, রংপুর বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং ঠাকুরগাঁও বর্ডার গার্ড উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সকালে সাড়ে ১০টার দিকে বিজিবি সদস্য, শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা ওই গ্রামে পৌঁছেন। এরপর ১১টার দিকে মাহরীন চৌধুরীর কবরে পুষ্পমাল্য অর্পন, স্যালুট প্রদান, এক মিনিট নিরবতা পালন ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
আনুষ্ঠানিকতা শেষে ঠাকুরগাঁও বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল গোলাম রব্বানী বলেন, শিক্ষিকা মাহরীন চৌধুরী শুধু একজন শিক্ষকই নন, তিনি মানবতার এক মূর্ত প্রতীক। তিনি তার মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে ভভিষ্যৎ প্রজন্মকে শিখিয়ে গেছেন সাহনিকতা, মানবিকতা ও দায়িত্ববোধ। তিনি প্রমান করে গেছেন শিক্ষকতা শুধু একটি পেশাই নয়, এটি একটি সামাজিকতা ও মানবিকতার সাথে সদা সমুজ্জল একটি মাহান ব্রত। এই মহিয়সী, অকুতভয় এবং আত্মউৎসর্গকারী মাহরীন চৌধুরীর সমাধিতে আজকে আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পেরে গর্বিত।
তিনি বলেন, ‘প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থীর প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন শিক্ষিকা মাহরীন চৌধুরী। তিনি শরীরের ৮০ ভাগ দগ্ধ হওয়ার পরও আপ্রাণ চেষ্ঠা করেছেন শিশুদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য। তার এই মহান আত্মত্যাগ, মানবিকতা, সাহসিকতা পুরা জাতিকে অনুরনিত করেছে। এই মর্মান্তিক এবং এই হৃদয়বিদারক ঘটনার জন্য বিজিবি পরিবারও গভীরভাবে শোকাহত, মর্মাহত ও বাকরুদ্ধ। বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়ে বিজিবি পরিচালিত বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দকে নিয়ে এবং আমরা বিজিবি সদস্যরা আজ এখানে উপস্থিত হয়েছি মহান মহিয়সী শিক্ষিকার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদেনের জন্য। এক মিনিট নিরবতা পালনের মাধ্যমে এবং পুষ্পাপর্ণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। এবং দোওয়ার মাধ্যমে তার বিদেহী আত্মার মাগরেফরাৎ কমানা করেছি।’
রংপুর বর্ডার গার্ড উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিবা নওশনি বলেন, আমরা মর্মাহত এবং শোকাহত ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার কারণে। কিন্তু এর মাঝেও আমাদেরকে গর্বিত করেছেন প্রয়াত শিক্ষকা মাহরীন চৌধুরী। দুর্ঘনটার সময় তিনি নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে ছোট ছোট শিশু শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করেছেন। তার এই সাহসিকতা এবং দূরদর্শীতার দৃষ্টান্ত আমরা মনে রাখবো।
একই প্রতিষ্ঠানের অপর শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ বলেন, তিনি শুধুমাত্র একজন শিক্ষিকাই নন, ছিলেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবক। নিজের জীবনশক্তি থাকা পর্যন্ত সেখানে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে বাঁচিয়েছেন। নিজের জীবন বিপন্ন করে তিনি যে বীরত্ব দেখিয়েছেন, এই মহিয়সী নারীকে অবশ্যই সকলের সন্মান জানানো প্রয়োজন। আমরা তাঁর বীরত্ব মনে রাখবো, তিনি শিক্ষক সমাজের গর্ব।
ঠাকুরগাঁও বর্ডার গার্ড উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ সাইদ বলেন, বাবা মায়ের পরে শিক্ষকের স্থান, সেই কাজটি তিনি করে দেখিয়েছেন। সারাজীবন তাকে মনে রাখবে বাংলাদেশ, মনে রাখবে সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক সমাজসহ সকল মানুষ।
উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত হয়ে রাতে চিরবিদায় নেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা মাহরীন চৌধুরী। ২২ জুলাই বিকাল চারটার দিকে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি চৌধুরীপাড়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। তিনি তার নিজ গ্রামের বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ছিলেন।
কেকে/ এমএস