মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিট পুলিশিং সভায় পুলিশের পাশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকে বসানো এবং তার বক্তব্য দেওয়ার ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার (১৯ জুলাই) সন্ধ্যায় উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের ভূজপুর এলাকায় অনুষ্ঠিত ওই সভায় এমন দৃশ্য দেখা যায়, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। সভায় উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল থানার এসআই এবং আশিদ্রোন ইউনিয়নের বিট অফিসার বাবলু কুমার পাল। তার পাশেই বসানো হয় স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ মিয়াকে। শুধু বসানোই নয়, ফরিদ সভায় বক্তব্যও দেন। তার বক্তব্য চলাকালীন সময়ে বেশ কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করলে বিষয়টি দ্রুত ভাইরাল হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমজুড়ে এখন শুধু এই ঘটনাই আলোচনার কেন্দ্রে। অনেকেই পোস্টে মন্তব্য করছেন, জুলাই গনঅভ্যুত্থান দিবসেও ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পুলিশের মঞ্চে স্থান দেওয়া ও বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ থাকলে বিট পুলিশিং এর নিরপেক্ষতা কোথায়? সব মিলিয়ে শ্রীমঙ্গলের এ ঘটনা নতুন করে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
ঘটনার পর স্থানীয় বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা থানার এসআই বাবলু কুমার পালকে প্রত্যাহারের দাবি জানান। তাদের অভিযোগ, পুলিশের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন ভূমিকায় তারা উদ্বিগ্ন।
জানা যায়, ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক মামলায় ফরিদ মিয়া গ্রেফতার হয়ে ৪ মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হন। মামলা নম্বর (২৪জিআর ২৪৯, তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০২৪)। এ ছাড়া ফরিদ মিয়ার ছেলে হৃদয় আহমদ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কলেজ নেতা।
বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ফরিদ মিয়া ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (হাজী মুজিব) গাড়ি ভাঙচুর ও পথসভায় হামলা করে নেতাকর্মীদের আহত করে উলটো বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা গায়েবি মামলা দিয়ে ঘরবাড়ি ছাড়া করেছেন। তৎকালীন সময় ভোজপুর বাজার থেকে শ্রীমঙ্গল পৌর যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল কাদিরসহ আরো তিনজন গ্রেফতার হন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ফরিদ মিয়া অতীতে ঘুষের বিনিময়ে সালিশি রায় দিয়ে একপক্ষকে অন্যায়ভাবে জয়ী করার অভিযোগে ব্যাপকভাবে আলোচিত ছিলেন। কেউ কেউ বলছেন, তিনি টাকা দিয়ে ন্যায়কে অন্যা এবং অন্যায়কে ন্যায়ে পরিণত করতেন। এইসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই তার বিচার দাবি করছেন।
এদিকে এসআই বাবলু কুমার পালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি খুব বেশিদিন হয়নি শ্রীমঙ্গল থানায় জয়েন করেছি, সবাইকে আমি চিনি না। ফরিদ মিয়া যে আওয়ামী লীগ নেতা, এ বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এই সভায় স্থানীয় লিটন মেম্বারসহ এলাকার অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। মেম্বার বা কেউই আমাকে এ বিষয়টি জানাননি বা বাঁধা দেননি। তবে ওই আওয়ামী লীগ নেতাসহ যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে আমরা তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। সে তো জামিনে আসছে। আর আমাদের অফিস ক্লার্ক সম্ভবত নতুন। যার কারণে তাকে চিনতে পারেনি। ওই আওয়ামীল নেতা যদি আইনশৃঙ্খলার অবনতি করার চেষ্টা করে তাকে আবারো ধরা হবে। যেহেতু সে জামিনে আছে তাই আমরা কিছু বলতে পারছি না।
কেকে/এএম