মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে আলোচিত কলেজ ছাত্র হৃদয় আহমেদ ইয়াছিন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা পুলিশ। এই ঘটনায় জড়িত দুই আসামিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত গামছা, স্কুল ব্যাগ, ভিকটিমের মোবাইল ও মোটরসাইকেল।
সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশনস) নোবেল চাকমা ও শ্রীমঙ্গল থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন—কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার দাড়িয়াকান্দি এলাকার কাজল মিয়া (২০) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার রাজাপুর এলাকার সিরাজুল ইসলাম (২১)। বর্তমানে তারা উভয়েই শ্রীমঙ্গল উপজেলার শাহীবাগ এলাকায় বসবাস করতেন এবং দুইজনই মাদকাসক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। কাজল মিয়া পেশায় টমটম চালক ও সিরাজুল ইসলাম পেশায় বাদাম বিক্রেতা।
নিহত হৃদয় আহমেদ ইয়াছিন কমলগঞ্জ সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র এবং ওয়াইফাই অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। অনলাইন জুয়ায় জড়িয়ে তিনি বন্ধুর কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা ধার নেন। ওই পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধ থেকেই হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত।
পুলিশ জানায়, গত ৭ জুলাই সকালে শ্রীমঙ্গলের কাকিয়াছড়া চা বাগানে এক গাছের নিচে গলায় বেল্ট পেঁচানো অবস্থায় হৃদয়ের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। শ্রীমঙ্গল থানার মামলা নং-১৪, ধারা- ৩০২/২০১/৩৪।
পরবর্তীতে মৌলভীবাজার পুলিশ সুপারের নির্দেশে একটি বিশেষ তদন্ত টিম গঠন করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তি, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শ্রীমঙ্গল থানার এসআই অলক বিহারী গুণ ও এসআই মো. মহিবুর রহমানের নেতৃত্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রাজাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারদের প্রাথমিক জবানবন্দিতে জানা যায়, টাকা-পয়সার বিরোধকে কেন্দ্র করে তারা হৃদয়কে পরিকল্পিতভাবে চা বাগানে নিয়ে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
পরে গলায় বেল্ট পেঁচিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রাখে, যাতে আত্মহত্যা মনে হয়। হত্যার পর তারা হৃদয়ের মোবাইল ফোন আর মোটরসাইকেল নিয়ে রাত প্রায় ১২টার দিকে হবিগঞ্জ রোডে সখিনা সিএনজি পাম্পের পাশে মোর্শেদ নামে একজনের দোকানে যায়। সেখানে মোবাইলটি মাত্র ২৫০ টাকায় বিক্রি করে মোটরসাইকেল নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার রাজাপুর গ্রামে নানার বাড়িতে পালিয়ে যায়।
মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে এবং মামলার তদন্ত চলছে।
কেকে/এএম