আকস্মিক অতি বৃষ্টি ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতিতে কুমিলায় গোমতী নদীর দুই তীরের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে৷ গোমতী নদীর পানি এখনো বিপদসীমার প্রায় ২ দশমিক ৮ মিটার নিচে রয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় ১০ সে. মি. করে বাড়ছে এ নদীর পানি। এ নদীর পরবর্তী পরিস্থিতি নির্ভর করবে বৃষ্টিপাত ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের উপর। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১২৯ মি. মি.।
বুধবার (৯ জুলাই) বিকাল ৪টায় কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
গোমতী নদীর চরাঞ্চলের বাসিন্দারা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে উঠে আসছেন নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে।
এছাড়াও আরো কয়েক মিটার পানি বাড়লে ডুবে যাবে কুমিল্লার সবজি ভাণ্ডার খ্যাত এ নদীর চর। এতে শাক-সবজির ক্ষেতগুলো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।
এদিকে শুকনো মৌসুমে এ নদীর চর থেকে মাটি কাটায় বদলে গেছে নদীর গতিপথ। এ কারণে এখন তীব্র স্রোতের মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি। গোমতি নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ দিয়ে দেবিদ্বার, মুরাদনগর ও বুড়িচংয়ের অন্তত ৩০ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খাঁন মোহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামান বলেন, কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই কুমিল্লায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভারতের অংশেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় গোমতী নদীর পানি বেড়েছে৷ বৃষ্টি থেমে গেলে এবং উজানের ঢল বন্ধ হলে বিপদ কাটতে পারে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, বন্যা মোকাবেলায় ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের ৫৮৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও জিআর চাল মজুত আছে।
শিক্ষক ময়নাল হোসেন বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে সেখানে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের কুমিল্লা অঞ্চলেও টানা কয়েকদিনের ঝুমবৃষ্টি। এ কারণে নদীর তীরের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে নদীর পানি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দেবিদ্বার পৌর এলাকার বারেরারচরের বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, নদীর গতিপথ বদলে যাওয়ায় নদীর চর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আর মাত্র ৮ থেকে ১০ ফুট ভেঙে গেলে নদী প্রতিরক্ষা বাঁধে আঘাত হানবে। আমাদের বাড়ির সামন দিয়ে হওয়ায় আমরা অনেক ভয় থাকি।
বুড়িচং উপজেলার কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, গত বছরের বন্যার ক্ষত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই, আবার বন্যার আশঙ্কা। এখন আমাদের ফসল ঘরে তোলার সময়। বন্যা হলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। আমাদেরকে পথে বসতে হবে।
জাফরগঞ্জ এলাকার নদীচরের বাসিন্দা আব্দুল ওহাব মিয়া বলেন, আমরা খুবই ভয়ের মধ্যে আছি। নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে আমাদের চরের সাথে অন্য এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নৌকা ছাড়া চলাচলের পথ থাকে না। এজন্য আমাদের বাড়ির প্রয়োজনীয় মালামাল আমরা সরিয়ে নিচ্ছি।
কেকে/ এমএস