‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়’ এই প্রতিপাদ্যে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কুমিল্লায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়েছে।
বুধবার (২৫ জুন) সকালে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যোগে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিরুল কায়সার।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পঙ্কজ বড়ুয়ার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন আলি নুর মোহাম্মদ বশির আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীম কুদ্দুস ভূঁইয়া,পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজিব,সাংবাদিক আবুল হাসনাত বাবুলসহ অনেকে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজিব বলেন,বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় মাইক্রোপ্লাস্টিক (অর্থাৎ ৫ মিমি বা তার চেয়ে ছোট প্লাস্টিক কণা) ব্যবহারের মাত্রা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্লাস্টিক দ্রব্যের অতিরিক্ত ব্যবহার ও অনিযন্ত্রিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে এই ক্ষুদ্র কণাগুলো এখন আমাদের পরিবেশের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সরাসরি মানবদেহে প্রবেশ করছে।
বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ, বাতাসে শ্বাস গ্রহণ, এবং ত্বকের সংস্পর্শ—এই তিনটি পথেই মাইক্রোপ্লাস্টিক মানবদেহে প্রবেশ করে। একবার প্রবেশের পর এই কণাগুলো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে জমা হতে থাকে এবং উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বিশেষ করে, মাইক্রোপ্লাস্টিক ফুসফুসে প্রবেশ করে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা কোষ ম্যাক্রোফেজ-এর কার্যক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। ম্যাক্রোফেজ কোষ মানবদেহে সংক্রমণ প্রতিরোধ, টিস্যু মেরামত এবং প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের প্রদাহ, শ্বাসকষ্ট, এমনকি ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।
পরিবেশ সংরক্ষণ, পরিবেশগত মান উন্নয়ন ও পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রশমনকল্পে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার বিগত ২০০২ সালে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। ২০০২ সালে পলিথিন নিষিদ্ধের আইন প্রণয়নের পর তা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের ফলে বিকল্পের চাহিদা দেখা দেয় এবং তা বাজারে চলে আসে। জনগণও তা গ্রহণ করে কিন্তু এ অর্জন আমরা ধরে রাখতে পারিনি।
১৭টি পণ্যকে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক হিসেবে চিহ্নিত করে গত ২৮ আগস্ট, ২০২৪ এ সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এছাড়াও, বিগত ৯ এপ্রিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রথম ধাপে Straw, Stirrer এবং Cotton Bud এই তিনটি সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয় বা বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন এবং ব্যবহার আগামী ১ জুন থেকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
আমাদের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বনাশা পলিথিনের ব্যপারে জিরো টলারেন্স গ্রহণ করেছে। বিগত ১ অক্টোবর ২০২৪ হতে সব সুপারশপে নিষিদ্ধ পলিথিন/পলিপ্রপাইলিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে গৃহীত কর্মসূচির অংশ হিসেবে পরিবেশ অধিদপ্তর, কুমিল্লা কর্তৃক জনসচেতনতামূলক প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। পরে শিশু চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
কেকে/এএস