বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পুনর্মিলনীতে জাতীয় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের অর্জন ধরে রাখতে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের মধ্যেও ন্যূনতম ঐক্য ধরে রাখতে হবে। পরিবর্তনের সুযোগ নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।
শনিবার (২১ জুন) বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। পুনর্মিলনীর শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধের শহিদ ও ২০২৪ এর জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শহিদসহ সকল শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়; শহিদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের অঙ্গিকার ব্যক্ত করা হয়।
জাতীয় নেতৃবৃন্দ আরো বলেছেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের অর্জন ধরে রাখতে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের মধ্যেও ন্যূনতম ঐক্য ধরে রাখতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক শক্তিসমূহের মধ্যকার বিভাজনের সুযোগে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তিসমূহ যাতে পুনর্বাসিত হতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বিচার, সংস্কার ও আগামী মধ্য ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির দুই দশকের ধারাবাহিক লড়াই সংগ্রামের প্রশংসা করে বলেন ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণসংগ্রামে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ভুমিকা দেশবাসী শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।তারা বলেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।
অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র তরুণসহ জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের পথেই রক্তঝরা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে বিদায় দিয়েছি। এখন আন্দোলনের এই অর্জনকে ধরে রাখতে সংস্কারের পথে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
আমির খসরুর মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পুরানো বাবস্থার পরিবর্তন চাই বলে আমরা সবাই মিলে ৩১ দফা দিয়েছি। গণতান্ত্রিক ধারায় নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে আমাদেরকে রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমাদের অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের অর্জন ধরে রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রজ্ঞা ও দূরদর্শীতার পরিচয় দিতে হবে। লন্ডনে নির্বাচন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা বৈঠকের পর এখন সরকারের উচিত হবে রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে আস্থায় নিয়ে বিচার, সংস্কার ও মধ্য ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ঘোষণা করা। তিনি সরকারকে তাদের এজেন্ডা ছোট করে আনার পরামর্শ দেন। তিনি দড়ি বেশী টানাটানি না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, দেশের ভিতরে ও বাইরে অনেকেই আমাদের অনৈক্যের সুযোগ নিতে ওৎ পেতে আছে। দেশের মানুষের অধিকার ও মুক্তি অর্জনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি জনগণের ভালবাসা নিয়ে আগামী দিনগুলোতেও আপোষহীন ধারায় তার সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অতীতে পরিবর্তনের অনেক সুযোগ আমরা নষ্ট করেছি। এবার সংস্কারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের এই সম্ভাবনা কোনোভাবেই বিনষ্ট করা যাবে না। তিনি আশা করেন রাজনৈতিক নেতারা এবার দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন।
অনুষ্ঠানে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরী, দলের যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ইমরান সালেহ প্রিন্স, উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আবদুস সালাম, স্বনির্ভর বিষয়ক সহসম্পাদক নীলুফার চৌধুরী মনি, গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা নাগরিক ঐক্য এর সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার।
আরো বক্তব্য রাখেন- প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, বাসদের প্রধান উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণফোরামের শীর্ষ নেতা নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ডা. মিজানুর রহমান, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, বাসদ-মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা, সাংবাদিক ও লেখক আবু সাঈদ খান, কবি মোহন রায়হান, রেজাউদ্দিন স্টালিন, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, জাগপার সাধারণ সম্পাদক ডা. ইকবাল হাসান, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহ্বায়ক শেখ আবদুর নূর, এনডিএমের মহাসচিব মমিনুল আমিন, এনডিপির চেয়ারম্যান কে এম আবু তাহের, উর্দুভাষীদের নেতা সাদাকাত খান ফাক্কু, সিনিয়র অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বহু রক্ত দিয়ে আমরা আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে বিদায় দিয়েছি সাম্যভিত্তিক মানবিক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনের লক্ষ্যে। তারা বলেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এই লড়াই শেষ অব্দি এগিয়ে নেবে। জনগণের স্বার্থ ও অধিকারের প্রশ্নে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আপোষহীন।
নেতারা আরো বলেন, কোনো চেহারায় স্বৈরতন্ত্রকে বাংলাদেশে আর শিকড় বিস্তার করতে দেওয়া যাবে না।
এই অনুষ্ঠানে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছার আলী দুলাল, মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাশিদা বেগম, সাইফুর রেজা মামুন, মাহমুদুল হাসান পিপলু, সাইফুল ইসলাম, মীর রেজাউল আলম, ফিরোজ আলী, কেন্দ্রিয় সংগঠক আইয়ুব আলী, বাবর চৌধুরী, ইমরান হোসেন, ঢাকা মহানগর কমিটির নেতা মো. সালাউদ্দীন, মিজারুল রহমান ডালিম, আরিফুল ইসলামসহ পার্টির ঢাকা মহানগরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কেকে/এজে