শরীয়তপুর জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর থেকেই একটি অংশ কমিটি বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ করে আসছে।
তৃতীয় দিনের মতো আজ বৃহস্পতিবারও দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত শহরের ব্যস্ততম প্রধান সড়ক চৌরঙ্গী মোড়ে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে জেলা ছাত্রদলের একাংশ। এতে সড়কের দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এসময় চরম ভোগান্তিতে পড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেক চালক ও যাত্রী সাধারণ।
এদিকে শরীয়তপুর জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মুন্সীর ওপর হামলা চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। দুপুর ১টার দিকে শরীয়তপুর সরকারি কলেজের সামনের সড়কে এ হামলা চালানো হয়। এসময় তার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তাকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ছাত্রদলের একাংশ এ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রুহুল আমিন মুন্সি।
পরে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে বিক্ষোভকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে পুলিশ।
এ বিষয়ে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, ছাত্রদের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ আজও শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এতে সড়কের দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। আমরা খবর পেয়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করি। এদিকে বিএনপি নেতা রুহুল আমিন মুন্সির ওপর হামলার খবর পেয়েছি। তবে এ বিষয়ে এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগের ভিত্তিতে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (৩ জুন) ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট শরীয়তপুর জেলা আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়।
এতে এইচ.এম জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক ও সোহেল তালুকদারকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কমিটির বাকি সদস্যদের মধ্যে ১৬ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও ১৭ জনকে সদস্য করা হয়।
আগামী ১ মাসের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটি পূর্নাঙ্গ করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই কমিটি প্রত্যাখান করে কমিটি বাতিলের দাবিতে ওইদিন থেকেই শহরে বিক্ষোভ করে জেলা ছাত্রদলের একাংশ। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার বিকালে জেলা ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হন।
কমিটি বাতিলের দাবিতে গতকাল বুধবার দুই ঘন্টা শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কে বিক্ষোভ করে জেলা ছাত্রদলের একাংশ। এসময় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে বিক্ষোভকারীরা। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে সড়ক থেকে চলে যায় বিক্ষোভকারীরা।
ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ আবার শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কের চৌরঙ্গী মোড়ে সড়ক অবরোধ করে ঘন্টা ব্যাপী বিক্ষোভ করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
এসময় পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ কারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে পুলিশ।
এসময় বিক্ষোভে অংশ নেওয়া জেলা ছাত্রদলের সেক্রেটারি পদপ্রত্যাশী ইমাম হোসেন মোল্লা বলেন, যতোদিন আহবায়ক কমিটি বাতিল ঘোষণা করা না হবে ততোদিন আমাদের বিক্ষোভ চলবে।
পরে বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে শরীয়তপুর সরকারি কলেজের দিকে চলে যায়।
এসময় শরীয়তপুর সরকারি কলেজের সামনের সড়ক দিয়ে স্ত্রীসহ মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার সময় জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ভিপি রুহুল আমিন মুন্সির ওপর হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। এসময় তার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় হামলাকারীরা। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। পরে অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এ বিষয়ে হামলার শিকার বিএনপি নেতা রুহুল আমিন মুন্সির স্ত্রী এডভোকেট মুনিরা আক্তার বলেন, আমার স্বামী রুহুল আমিন মুন্সি আমাকে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় বিক্ষোভকারীরা আমার স্বামীর ওপর হামলা চালায়। তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় আমরা তাকে ঢাকা নিয়ে যাচ্ছি। আমি এর বিচার চাই।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার এ কে এম নাসির উদ্দীন কালু বলেন, ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে একটি অংশ বিক্ষোভ করে আসছে। আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। কিন্তু যারা সড়ক অবরোধ করে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করছে তারা ঠিক করছেনা। এবং যারা ফৌজদারি অপরাধ করছে তাদের বিচার হওয়া উচিত।
কেকে/ এমএস