প্রবাস ফেরত এনাম দীর্ঘ ২০ বছর কাটিয়েছেন প্রবাসে। প্রবাস জীবনে তার ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য, ছিল আয়ও। কিন্তু ছিল না স্থায়িত্ব। দেশে ফিরে যেন জীবন বদলে গেল একেবারেই। এখন তিনি একজন খামার উদ্যোক্তা।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভার দক্ষিণ দৌলতপুর গ্রামের মুহাম্মদ এনাম যখন দেশে ফিরে আসেন তখন শুরু হয় ঠিকে থাকার লড়াই। ব্যবসা শেষ, পুঁজি নেই। এ অবস্থায় নানান মানুষের কাছে ধারদেনা করে চলতে থাকেন। অভাব যেন তার পিছু ছাড়ছিল না। নিজের অর্জিত কিছু টাকা দিয়ে কিনেন একটি ষাঁড় গরু। এভাবেই শুরু তার খামার জীবনে যাত্রা। একটি গরু থেকে শুরু হয়ে বর্তমানে বিভিন্ন জাতের ২০টি গরু তার খামারে। তার খামারের নাম শতাব্দী এগ্রো ফার্মস। তিনি এখন একজন পরিশ্রমী সফল খামারি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নিজের বাড়ির সামনে এনাম গড়েছেন দারুণ এক গরুর খামার। ১টি গরু দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। সেই থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে গরুর সংখ্যা। গরুগুলো বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিজেই কিনেছেন। খামারে দিনরাত কাজ করছেন এনাম। কখনো ঘাস খাওয়াচ্ছেন, পানি দিচ্ছেন আবার কখনো গোবর পরিষ্কার করছেন। ছোট-বড় ২০টি গরুতে পরিপূর্ণ চমৎকার তার খামারটি।
মুহাম্মদ এনাম বলেন, ১টি গরু দিয়ে শুরুর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দুই বছর আগে ১০ লাখ টাকা খরচ করে ২০টি গরুধারণ ক্ষমতার শেড নির্মাণ করেছি। ভবিষ্যতে আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।
কোরবানির ঈদের প্রস্তুতি সম্পর্কে বলেন, অনেকেই ইতোমধ্যে খামারে এসে গরু দেখাদেখি শুরু করেছেন। দরদাম করেছেন। রয়েছে অনলাইনে গরু দেখা ও কেনার সুযোগ। ক্রেতার বাড়িতে পাঠানোরও ব্যবস্থা আছে।
নতুনদের উদ্দেশে এনাম বলেন, প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করা উচিত। বর্তমানে পশু ও পশু খাদ্যের মূল্য চড়া। তাই মূলধনের অতিরিক্ত অর্থের জোগান থাকা প্রয়োজন। নইলে ব্যবসা প্রসারে বাধা থাকবে।
গরুর খাবার সম্পর্কে তিনি বলেন, খামারে গরুগুলোকে প্রাকৃতিক ঘাস, খড়, গমের ভুষি, লবণ, খৈল, বুটের ভুষি খাওয়ানো হয়। প্রতিটি গরুর পেছনে বছরে ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়।
বেকার যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পরিশ্রম করে উদ্যোক্তা হতে পারেন। ব্যাপক হারে না হলেও দুই-চারটা গরু দিয়ে শুরু করতে পারেন। এতেই সফল খামারি হিসেবে পরিচিতি পাবেন। তবে গরুর খাবারের দাম বাড়ায় হিমসিম খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারিভাবে কিছু পাইনি। তবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা খামার দেখেছেন।
ফটিকছড়ি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুল মমিন বলেন, এনাম একজন সফল খামারি। তাকে দেখে অনেকেই খামার করতে উদ্বুদ্ধ হবেন। তিনি সহায়তা পাওয়ার যোগ্য। খামারটি বেশ সম্ভাবনাময়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়নে এনাম যে কাজ করছে তা দেশের জন্য ইতিবাচক। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে আমরা সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।
কেকে/এএস