মো. এহসানুল হক, মৌলভীবাজার
প্রকাশ: সোমবার, ২৬ মে, ২০২৫, ১১:২৩ পিএম

এক টনেরও বেশি ওজনের ষাঁড় ‘তুফান’। ছবি : প্রতিনিধি
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে মৌলভীবাজার জেলায় এবার কুরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ৮০হাজারেরও বেশি গবাদিপশু। ইতোমধ্যে পশু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার সাতটি উপজেলায় খামারিরা। শ্রীমঙ্গল উপজেলায় এবার কুরবানির পশুর হাট কাঁপাতে প্রস্তুত করা হয়েছে ১ টনের বেশি ওজনের ফ্ল্যাকবি জাতের ষাঁড় ‘তুফান’। ষাঁড়টির মূল্য ১৩ লাখ টাকা চাচ্ছেন খামার কর্তৃপক্ষ।
প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় নিবন্ধিত খামারির সংখ্যা ৭ হাজার ৩৭২টি। জেলায় এবছর কুরবানির পশুর চাহিদা ৭৯ হাজার ৯২৯টি হলেও প্রস্তুত করা হয়েছে ৮০ হাজার ৬৩৭টি পশু। এর মধ্যে রয়েছে ৪৬ হাজার ৫৮০টি গরু, ১ হাজার ২৭২টি মহিষ, ২৮ হাজার ৬২২টি ছাগল ও ৪ হাজার ১৬৩টি ভেড়া।
সরেজমিনে শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের হাইল হাওর সংলগ্ন জেটি রোডে অবস্থিত শ্রীমঙ্গল এগ্রো খামারে গিয়ে দেখা যায়, চার কেয়ার জায়গাজুড়ে তৈরি করা বিশাল গবাদি পশুর খামারে রয়েছে ফ্রিজিয়ান জাতের ৩ শতাধিক গরু। এরমধ্যে ছোট ও মাঝারি ওজনের গরুর চাহিদা বেশি থাকায় ইতোমধ্যে খামারের ছোট ও মাঝারি সাইজের সকল গরু বিক্রি হয়ে গেছে। তবে এবারের কুরবানির জন্য বিক্রিযোগ্য বড় ষাঁড় রয়েছে প্রায় ১০টি। যেগুলোর মূল্য দেড় লাখ থেকে শুরু করে ১৩ লাখ টাকা পর্যন্ত।
খামারের গরুগুলোর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ এক টনেরও বেশি ওজনের একটি ষাঁড়। যার নাম তুফান। গত বছরও এটি কুরবানির হাঁটে তোলা হয়েছিল, কিন্তু চাহিদা আনুযায়ি দাম না পাওয়ায় বিক্রি করা হয়নি বলে জানান শ্রীমঙ্গল এগ্রোর ডিজিএম মো. আরিফ হোসেন।
তিনি বলেন, বেকারত্ব দূরিকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড প্রবাসী মিনহাজ নাসির ‘বিসমিল্লাহ শ্রীমঙ্গল এগ্রো’ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতি বছরই এ খামারে জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় বড় ষাড় পাওয়া যায়। এবারও এই খামারে রয়েছে ১টনের বেশি ওজনের ফ্ল্যাকবি জাতের একটি ষাড়। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘তুফান’। ষাড়টি উচ্চতায় ৫ ফিট ৮ ইঞ্চি এবং লম্বায় সাড়ে ১১ ফিটের মতো। ওজন মাপার মেশিনে যেটির ওজন রয়েছে প্রায় ১ হাজার ১৫০ কেজি। এই ষাড়টি দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছেন দর্শনার্থী ও ক্রেতারা। তুফানের দাম চাওয়া হচ্ছে ১৩ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত অনেকেইে দরদাম করে গেছেন। ষাঁড়টিকে খামারে রেখে ছয় বছর ধরে সম্পূর্ণ ভেজালমুক্ত দেশীয় খাবার দিয়ে বড় করা হয়েছে। ডাল, ঘাস, ভাতের মাড় ছাড়া কোনো ফিড বা ওষুধ খাওয়ানো হয়নি।
এদিকে ঈদের এখনো প্রায় দুই সপ্তাহ বাকি থাকলেও দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা জেলার বিভিন্ন খামারে আসতে শুরু করেছেন। সরেজমিনে জেলার আদমপুর, টেংরা, ব্রাহ্মণবাজার, শমশেরনগর, ভৈরববাজার ও শ্রীমঙ্গল ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের হাটবাজারে কুরবানির পশু উঠতে শুরু করেছে। এসব বাজারে কৃষকেরা স্থানীয় পাইকারদের কাছে গরু বিক্রি করছেন আর স্থানীয় পাইকাররা তা জেলার বড় পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন। ঈদের আগের দিনগুলোতে বিক্রি সবচেয়ে বেশি হবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আশরাফুল আলম খান বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় এবছর কুরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৭৯ হাজার ৯২৯টি পশু। প্রস্তুত করা হয়েছে ৮০ হাজার ৬৩৭টি পশু। চাহিদার চেয়ে প্রায় ৭০০ পশু বেশি রয়েছে। আরো অনেক কৃষকের একটি-দুটি করে পশু রয়েছে সেগুলো ছাড়াও। তাই এবার কুরবানির পশুর কোনো সংকট নেই।
কেকে/ এমএস