সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
দেশজুড়ে
৫৩ বছর বৈঠা হাতে তিতাস নদীর মাঝি মিজান মিয়া
মো. আমজাদ হোসেন, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
প্রকাশ: রোববার, ২৫ মে, ২০২৫, ৫:১৪ পিএম আপডেট: ২৫.০৫.২০২৫ ৫:২৬ পিএম

বয়স হয়ে গেছে, পা গুলো অচল হয়ে গেছে, আমি আর আগের মতো নৌকা বাইতে পারি না। চার ছেলে, তিন মেয়ে নিয়ে সংসার। নৌকা চালিয়ে সংসার চলে না, তাই তিন ছেলেকে আস্তে আস্তে বিদেশ পাঠাইছি। দ্বিতীয় ছেলেটা মালদ্বীপ গিয়ে আর কোনো খোঁজ-খবর নাই, আসেও না। তার বউ, ছেলে-মেয়েও আমার কাঁধে।

এ কথাগুলো বলতে বলতে চোখে জল চলে আসে মিজান মিয়ার। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের ভিটি বিশাড়া গ্রামের নিবেদিতপ্রাণ এক মাঝি তিনি। ১৯৭২ সাল থেকে বৈঠা হাতে তিতাস নদীর বুকে ছুটে চলেছেন নিরবচ্ছিন্নভাবে।

মিজান মিয়া বলেন, প্রতি দিন ফজরের সময় নদীতে নামি, আবার রাত হলে ঘরে ফিরি। অনেক লোক বিপদে পড়ে রাতে ডাকাডাকি করে—গাঙ পার করে দেওয়ার জন্য।

তিতাস নদীর বুক জুড়ে সূর্য ওঠে, আবার রাতের আঁধারে মিলিয়ে যায়। আলো-আঁধারির এই খেলা যেন প্রতিদিন নতুন করে লেখে তার সংগ্রামী জীবনের গল্প।

তিনি বলেন, এখন অচল হয়ে গেছি, বয়স হয়েছে, আর নৌকা বাইতে পারি না। গ্রামবাসীকে বলেছি, আমি আর পারি না—অন্য কাউকে নৌকা চালাইতে বলছি। কিন্তু এত কষ্টের কাজ কেউ রাজি হয় না। যত দিন আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখেন, তত দিন লোক দিয়ে কাজ করাই। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা ইনকাম করে কিছু আমি রাখি, কিছু লোককে দিই।

রোদ, বৃষ্টি, ঝড়—প্রকৃতির কোনো প্রতিকূলতাই থামাতে পারেনি মিজান মিয়াকে। ছাত্র-ছাত্রী বহনের সময় নৌকা ডুবে যাওয়া, যাত্রীদের অবজ্ঞা, সমাজের অবহেলা—সব কিছুকে পেছনে ফেলে আজও তিনি নৌকা চালান।

কোনো দিনও সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্যের মুখ দেখিনি, বলেন মিজান মিয়া। যেন নদীর মাঝেই ফেলে রাখা হয়েছে আমাদের প্রাপ্য অধিকারগুলো, যা আর তীরে এসে পৌঁছায় না।

তার সহকর্মী অহিদ মিয়া বলেন, আমাদের জীবন চলে রোদ, বৃষ্টি, ঝড়-তুফানে। নৌকা চালিয়ে যে টাকা পাই, এ টাকা দিয়ে সংসারের বাজার খরচই হয় না।

তিনি আরো বলেন, বছরের পর বছর নদীতে কাটিয়ে দেওয়ার পরও মাঝিদের কোনো সুযোগ-সুবিধা নাই। অনেক সময় টাকার অভাবে সন্তানের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। নৌকা চালানো শুধু পেশা না—এটা একটা জীবনভর লড়াই।

তবুও তারা থেমে যান না। মুখে কোনো অভিযোগ নেই, কষ্টের কথা চেপে রেখে প্রতিদিন নৌকা চালিয়ে যান। সেই নৌকার সঙ্গেই বহন করেন জীবনের ভার।

অহিদ মিয়া আরো বলেন, ঝড়-তুফানের সময় গাঙয়ের দুপাশে বাঁশের খুঁটি দিয়ে রশির বাঁধগুলো ছিঁড়ে যায়। তখন কচুরিপানার জন্য নৌকা চালাতে পারি না। তখন যাত্রীরাও হয়রানির শিকার হয়, আমরাও।

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়েশা নুসরাত ভূঁইয়া বলেন, আমরা স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় ভয়ে থাকি, কখন যে নৌকা ডুবে যায়। এখানে একটি ব্রিজ হলে আমাদের কষ্ট অনেক কমে যেত।

আরেক শিক্ষার্থী নিয়ামুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ঝড়-তুফানের সময় আমরা স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় অনেক ভোগান্তির শিকার হই। এখানে একটি ব্রিজ হলে শিক্ষার্থীদের যেমন উপকার হতো, তেমনি উপকার হতো সাধারণ মানুষের।

স্থানীয়রা জানান, মিজান মিয়া একজন পরিশ্রমী মানুষ। অনেক আগে থেকেই দেখে আসছি, তিনি কষ্ট করে দুপাশে বাঁশের খুঁটি ও রশি দিয়ে কচুরিপানা ঠেকিয়ে যাত্রী পারাপার করেন। এখানে একটি ব্রিজ হলে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হতো।

কেকে/এএম
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
পাল্লা বাজারে রক্তলাল শাপলার মনভোলানো সমাহার
কালাইয়ে বিএনপির গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ

দেশজুড়ে- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close