১৬ বছরেও চালু হয়নি ১৪ কোটি টাকার খেওয়ারচর রাবার ড্যাম প্রকল্পটি। সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও এক দিনেও সেচ সুবিধা পাননি কৃষকরা। প্রকল্প চালু না হওয়ায় অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে ৮৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে রাবার ব্যাগটি। নষ্ট হয়ে ভেস্তে যেতে বসেছে এটি। এ নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রকল্প চালুর অনিশ্চিয়তা। দীর্ঘ দিনেও প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের দায়ী করছেন কৃষকরা। অপরিকল্পিতভাবে ও নিম্নমানের নির্মাণ কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে শুরু হয় উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ভারত সীমান্ত ঘেঁষা খেওয়ারচর এলাকায় জিঞ্জিরাম নদীতে রাবার ড্যাম প্রকল্পের কাজ। এ প্রকল্পে সরকারের ব্যয় হয় প্রায় ১৪ কোটি টাকা। প্রথম দফায় ১২ কোটি ও দ্বিতীয় দফায় অতিরিক্ত আরো ১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়।
সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রকল্প এলাকায় শ্যালো মেশিন বসিয়ে ফসলি সেচ দেওয়া হচ্ছে ফসলি জমিতে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ওই এলাকার কৃষকরা। সেতুর দুই পাশের সিসি ব্লক ধসে গেছে নদীতে। এ কারণে প্রতিবছর বন্যায় ভেঙে যায় পাশের বসতবাড়ি। রাবার ব্যাগ ফুলানোর অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ড্যামের ব্যাগটি। প্রকল্পের সুরক্ষা ও নদী শাসনের জন্য দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সিসি ব্লক ও সড়ক নির্মাণের কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
এ ছাড়াও প্রকল্প এলাকার লালকুড়া খেয়াঘাট থেকে বিক্রিবিল হয়ে খেওয়ারচর রাবার ড্যাম সেতু পর্যন্ত রয়েছে তিন কিলোমিটার কাঁচা সড়ক। এ সড়কটি দীর্ঘ দিন থেকে রয়েছে বেহাল অবস্থা। এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ওই এলাকার মানুষ।
বিক্রিবিল এলাকার আরেক কৃষক রঞ্জু মিয়া তিনি বলেন, তার চার বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। ওই জমিতে সেচ দিতে হয় শ্যালো মেশিন দিয়ে। এতে তার খরচ হবে ১৮ হাজার টাকা। তিনি জানান, শ্যালো মেশিন ভাড়া বিঘা প্রতি দিতে হয় ৬ হাজার টাকা।
খেওয়ারচর এলাকার কৃষক শহিদুর রহমান বলেন, প্রকল্প এলাকায় তার জমি রয়েছে দুই বিঘা। ওই জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। অন্যের শ্যালো মেশিন ভাড়া নিয়ে দিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। এতে তার ব্যয় হবে ১১ হাজার টাকা। রাবার ড্যামটি চালু হলে অল্প খরচে সেচ দিতে পারতেন তিনি।
একই এলাকার কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনিও দুই বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছেন। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় জমিতে সেচ দিতে দুস্কর হয়ে পড়েছে তার। রাবার ড্যাম চালু থাকলে তার এ অবস্থা হতো না।
প্রকল্প এলাকার কৃষক আব্দুল মালেক মন্ডল, সমেজ উদ্দিন, নজরুল ইসলামসহ অনেকে বলেন, সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে রাবার ড্যাম প্রকল্পের জন্য, কিন্তু এক দিনের জন্যও আলোর মুখ দেখেনি এ প্রকল্পটি।
তারা আরো বলেন, সামান্য খরচে জমিতে সেচ দেবেন তারা। এ নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তাদের, কিন্তু ১৬ বছরেও চালু হচ্ছে না এ প্রকল্পটি। সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের এ প্রকল্পটি।
রাবার ড্যাম প্রকল্প এলাকার সড়কে অটোভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন খেওয়ার চর সেতু এলাকার রুবেল মিয়া। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে এ সড়কের বেহাল দশা। বন্যা মৌসুমে কাদা পানি ও শুকনো মৌসুমে ধুলাবালি জমে থাকে এ সড়কে। অনেক কষ্টে এ সড়কে গাড়ি চালাতে হয়। যেদিন গাড়ি নষ্ট হয়, সেদিন সারা দিনের রোজগার করা টাকা খরচ হয়ে যায় গাড়ি মেরামতে। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। তিনি আরো জানান, এ সড়কে প্রতিনিয়ত চলাচল করে থাকে দেড় শতাধিক অটোভ্যান।
খেওয়ারচর রাবার ড্যাম প্রকল্প পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির (পাবসস) সভাপতি জাফর ইকবাল রিপন বলেন, রাবার ড্যাম প্রকল্পের আওতায় সদস্য রয়েছেন ৪২০ কৃষক। এ ছাড়াও সমিতির বাইরে রয়েছেন এক হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার জন কৃষক। এ প্রকল্প চালু করা হলে সেচ সুবিধা পাবেন ওইসব কৃষকরা। তবে প্রকল্পটি চালুর বিষয়ে বিভিন্ন দফতরে যোগাযোগ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ৩২০ হেক্টর আবাদি জমি। প্রকল্পটি চালু করা হলে সারফেস ওয়াটার ব্যবহার করতে পারবেন কৃষকরা। অল্প খরচে চাষাবাদ করতে পারবেন তারা। এতে লাভবান হবেন ওই এলাকার কৃষকরা। দ্রুত রাবার ড্যাম প্রকল্পটি চালু করার জন্য উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
রৌমারী উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মনছুরুল হক বলেন, রাবার ড্যাম ২০১৬ সালে সমিতির নীতিমালা অনুসারে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পরিচালনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা। যদি কারিগরি ত্রুটি থাকে, তা সরেজমিনে পরিদর্শন করে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
কেকে/এএম