মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় আদালতের নিষেধাজ্ঞার আদেশ অমান্য করে জোরপূর্বক জমি দখলচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে একটি পক্ষের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
খবর নিয়ে জানা যায়, গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের সাইদুল হক গং প্রতিবেশী আব্দুল করিম গংদের বিরুদ্ধে দৌলতপুর মৌজায় আরএস ৩৪১,৪৭৪,৫০০ ও ৫৩৯ দাগে ১৯৭ শতাংশ সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে সিনিয়র সহকারী জজ আদালত গজারিয়াতে একটি ঘোষণামূলক দেওয়ানি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৯৬/২৪।
উক্ত মামলায় বিবাদী আব্দুল করিম গং বিবাদী পক্ষের দাবিকৃত সম্পত্তি থেকে ৪৬.৯৬ শতাংশের মালিকানা দাবি করে উক্ত সম্পত্তিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করলে আদালত সেটি মঞ্জুর করেন। এদিকে বিবাদী পক্ষের নিষেধাজ্ঞার আবেদনটি মঞ্জুর হওয়ার পর থেকে বাদী পক্ষের লোকজন বিভিন্নভাবে নালিশি সম্পত্তি দখল করে ফেলার পাঁয়তারা করছে। বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে। যেকোনো মুহূর্তে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে।
সরেজমিনে বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুর বারোটার দিকে দৌলতপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করে দখল করে ফেলার চেষ্টা করছে বাদী পক্ষের লোকজন। স্থানীয়রা জানায় গত কয়েকদিন আগে কোর্ট থেকে জারিকারক এসে নিষেধাজ্ঞার আদেশনামার কাগজ দিয়ে গেলেও বাদী সাইদুল হক গং তা আমলে নিচ্ছে না। মামলায় তাদের অবস্থা সুবিধাজনক না হওয়ায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উক্ত জমিতে ঘরবাড়ি নির্মাণ করার চেষ্টা করছে তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা জুয়েল প্রধান বলেন, গত কয়েকদিন আগে বাদী পক্ষের ফেরদাউস, ফারুক, নুরুল আমিনসহ কয়েকজন জমিটির একপাশে টিন দিয়ে বেড়া দেয়। এখন তারা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে এই সম্পত্তিতে ঘর-দুয়ার তুলে ফেলার চেষ্টা করছে।
আরেক বাসিন্দা রোকসানা বেগম বলেন, একবার দেখলাম কোর্ট থেকে লোক এসে কিসের জন্য নোটিশ জারি করে দিয়ে গেল। দুটি সাইনবোর্ডও লাগানো হয়েছে। এখন দেখছি আরেক পক্ষ সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে ফেলার চেষ্টা করছে’।
বিষয়টি সম্পর্কে বাদী পক্ষের ফেরদৌস হোসেন বলেন, আমরা সম্পত্তি জবর দখল করতে চাচ্ছি এমন অভিযোগ সত্য নয়। এ বিষয়ে আপনাদের কাছে কিছু বলতে চাই না। আমাদের যা বলার আমরা কোর্টে বলব।
বিষয়টি সম্পর্কে বিবাদী পক্ষের আব্দুল করিম বলেন, এই ৪৬.৯৬ শতাংশ সম্পত্তি আমার, এই সম্পত্তি আমি ভোগদখলে রয়েছি। এখন তারা আমাকে জোরপূর্বক বেদখল করতে চায়। তারা মামলাটি দায়ের করেছে শুধুমাত্র আমাদের হয়রানির জন্য। মামলা দায়েরের পর তারা নিয়মিত কোর্টেও যাচ্ছে না। যখন নিষেধাজ্ঞার শুনানি হয় তখন তাদের আইনজীবীও কোর্টে ছিল না। আদালত আমাদের আবেদন মঞ্জুর করে আমাদের দাবিকৃত ৪৬.৯৬ শতাংশ জমির ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদান করে। এই আদেশের পর বাদীপক্ষের লোকজন জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের জন্য বেহুশ হয়ে গেছে। তারা বিভিন্নভাবে আমাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে তারা উক্ত সম্পত্তিতে ঘর-দুয়ার তৈরি করে তা দখল করে ফেলতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আতঙ্কিত।
বিষয়টি সম্পর্কে মুন্সীগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিসুজ্জামান আনিস বলেন, আদালত উক্ত সম্পত্তির ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এখন এই সম্পত্তিতে যেকোনো প্রকার স্থাপনা নির্মাণ বা মেরামত, আকৃতি পরিবর্তন অথবা ক্রয়-বিক্রয়ের আইনত কোনো সুযোগ নেই।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শহিদুল ইসলাম বলেন, এ সম্পত্তির ওপর আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার একটি আদেশ রয়েছে। এখন কেউ যদি জোরপূর্বক জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করতে চায় এবং এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে তবে অপরপক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে পারে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেকে/এএস