পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বিনোদনের খোঁজে দেশের অন্যতম বৃহৎ সেচ প্রকল্প ও দর্শনীয় স্থান তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় মানুষের ঢল নেমেছে। ঈদের দিন এবং তার পরের দিনগুলোতে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত এই ব্যারাজ এলাকায় পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় জমিয়েছেন। তবে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগমের বিপরীতে পর্যাপ্ত শৌচাগারের ব্যবস্থা না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ঘুরতে আসা মানুষজন, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা।
ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে এবং তিস্তার মনোরম দৃশ্য দেখতে রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে এসেছেন তিস্তা ব্যারাজে। ব্যারাজের মূল কাঠামো, নদীর প্রবাহ, সবুজ প্রকৃতি আর খোলা আকাশ দেখতে ভিড় জমিয়েছেন তারা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যারাজ এলাকা ও সংলগ্ন পার্ক এবং চরে মানুষের কোলাহল আর উচ্ছ্বাসে মুখরীত ছিল। অনেকে নদীর ধারে বসে বা চরে ঘুরে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন। কেউ কেউ ছবি তুলে বা ভিডিও করে মুহূর্তগুলো ধরে রাখছেন।
ঈদের এই আনন্দ শুধু তরুণদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রবীণরাও এসেছেন প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছুটা সময় কাটাতে। সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য, যেখানে নদীর জলে সোনালী আভা পড়েছে। দিনের শেষে যখন সূর্য ডোবে, তখন তিস্তা ব্যারেজের চারপাশের রং বদলে যায়। এই দৃশ্য যেন ঈদের আনন্দের এক পরিপূর্ণ রূপ।
তিস্তার পাড়ে রঙিন ঘুড়ি দোকানপাটসহ স্থানীয় হস্তশিল্পের পসরা নিয়ে বসেছেন কয়েকজন বিক্রেতা। ঈদের এই মিলনমেলায় স্থানীয় অর্থনীতিও চাঙ্গা হয়েছে। হস্তশিল্পের দোকানগুলোতে দেখা যাচ্ছে ক্রেতাদের ভিড়।
তিস্তা নদীতে কিছুটা পানি থাকায় ঈদের আনন্দে গা ভাসিয়েছে ছোটরাও। ছোটদের আনন্দ যেন বাঁধ মানছে না। ঈদের নতুন পোশাকে তারা তিস্তার পাড়ে দুরন্তপনা করছে, কেউবা আবার নৌকায় চড়ে উপভোগ করছে প্রকৃতির রূপ।
কিন্তু এই আনন্দের মাঝেই এক চরম ভোগান্তির নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে শৌচাগার সংকট। হাজার হাজার মানুষের জন্য ব্যারাজ এলাকায় পর্যাপ্ত ও ব্যবহার উপযোগী পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। যে কিছু দোকানদার কয়েকটি অস্থায়ী বা পুরনো শৌচাগার রয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগণ্য এবং সেগুলোর অবস্থাও খুব ভালো নয়। ফলে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে চরম বিপাকে পড়ছেন দর্শনার্থীরা। পুরুষরা কিছুটা আড়াল খুঁজে নিতে পারলেও নারী, শিশু ও বয়স্কদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। অনেকে বাধ্য হয়ে খোলা জায়গায় বা ঝোপঝাড়ের আড়ালে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, যা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি বিব্রতকর পরিস্থিতিরও সৃষ্টি করছে।
রংপুর থেকে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, "পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। জায়গাটা খুব সুন্দর, কিন্তু টয়লেটের কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। বিশেষ করে মহিলাদের খুব সমস্যা হচ্ছে। এত বড় একটা পর্যটন স্পটে এই অব্যবস্থা মেনে নেওয়া যায় না।"
আরেকজন নারী দর্শনার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "বাচ্চাদের নিয়ে এই ভোগান্তির মধ্যে পড়া খুবই কষ্টের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এখানে থাকতে হলে টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এখানে ভালো কোনো ব্যবস্থা না থাকায় খুব বিপদে পড়তে হয়েছে।"
স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর ঈদ বা অন্যান্য ছুটিতে তিস্তা ব্যারাজে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। কিন্তু সে অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা, বিশেষ করে শৌচাগার ও পরিচ্ছন্নতার দিকে কর্তৃপক্ষের তেমন নজর নেই। দর্শনার্থীদের এই ভোগান্তি কমাতে জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নির্মাণ বা অস্থায়ীভাবে হলেও পরিচ্ছন্ন টয়লেটের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হলে তিস্তা ব্যারাজের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনোদন কেন্দ্রের আকর্ষণ কমতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। দর্শনার্থীদের আনন্দযাত্রা যাতে ভোগান্তিতে পরিণত না হয়, সেজন্য পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি।
ভারতী থেকে ঘুরতে আসা নারী দর্শনার্থী লুব্বা হাসান বলেন, চমৎকার স্থান, কিন্তু এই জায়গাটি আরো সুন্দর করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। তাহলে দেশ বিদেশের অনেক মানুষ এখানে ঘুরতে আসবে বলে মনে করছি। বিষেশ করে আমরা যারা বাহিরে দেশ থেকে ঘুরতে আসি তারা যেন নিজ দেশে ফিরে এই দেশের দেশের অন্যতম বৃহৎ সেচ প্রকল্প ও দর্শনীয় স্থান তিস্তা ব্যারাজের কথা বলতে পারি।
পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি মোড়ে মোড়ে ব্যাপক পরিষদ সাদা পোশাকের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাতীবান্ধা থানার উপ-পরিদর্শক রিমন খন্দকার।
হাতীবান্ধা থানার উপ-পরিদর্শক রিমন খন্দকার বলেন, পরিচ্ছন্ন টয়লেটের ব্যবস্থা এই এলাকায় জরুরী হয়ে পড়েছে। এই এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন থেকে দাবি করে আসছেন। কেন করছেন না এ বিষয় আমার কোন ধারণা নেই। তবে ইচ্ছে করলে দর্শনার্থীদের এই ভোগান্তি কমাবে। তাই জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নির্মাণ করা প্রয়োজন।
কেকে/এআর