খোলা কাগজে সংবাদ প্রকাশের পর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু
মাহবুবুজ্জামান সেতু, মান্দা
🕐 ৬:৪৯ অপরাহ্ণ, মে ২৪, ২০২৩

দৈনিক খোলা কাগজ পত্রিকায় “নন এমপিও স্কুলের নামে পরীক্ষা দেওয়াচ্ছেন প্রধান শিক্ষক” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর মান্দার চকগোপাল উচ্চ বিদ্যালয় ও চকচম্পক ছোট বালিকা বিদ্যালয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন নওগাঁ জেলা শিক্ষা অফিসার মো. লুৎফর রহমান। সংবাদ প্রকাশের পর সোমবার (২২ মে) উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি।
নওগাঁর মান্দার চকগোপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি তার নিজ বিদ্যালয়ের ১৩ জন শিক্ষার্থীকে না জানিয়ে ‘চকচম্পক ছোট বালিকা বিদ্যালয়’ নামের একটি ননএমপিও স্কুলের নামে পরীক্ষা দেওয়াচ্ছেন। এঘটনায় ওই প্রধান শিক্ষকের ওপর ক্ষিপ্ত শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, ননএমপিও ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর কোটা পূরণ করতে এই অনিয়ম করছেন ওই দুই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, এলাকায় চকগোপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের সুনাম থাকায় এ স্কুলে শিক্ষার্থী বেশি ভর্তি হয়। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে ওই বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ১১৭ জন। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলী তার প্রতিষ্ঠান থেকে ১৩-১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত (ননএমপিও) চকচম্পক ছোট বালিকা বিদ্যালয়ের নামে শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে রেজিস্ট্রেশন ও ফরম পূরণ করান। তিনি বছরের পর বছর ধরে এই অনিয়ম করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
১১৭ জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা দেয়ার কথা থাকলেও চকগোপাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিচ্ছেন ১০৪ জন। বাকি ১৩ জন শিক্ষার্থীদেরকে না জানিয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলী চকচম্পক ছোট বালিকা বিদ্যালয়ের নামে ফরম করিয়ে পরীক্ষা দেয়াচ্ছেন। সেই ১৩ জন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৫ জন বিজ্ঞান বিভাগের আর ৮ জন শিক্ষার্থী মানবিক বিভাগের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী কয়েকজন পরীক্ষার্থী বলেন, আমরা চকগোপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ওই বিদ্যালয়ে আমরা ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত নিয়মিতভাবে লেখাপড়া করেছি। এসএসসি পরীক্ষায় বিদ্যালয় থেকে ১১৭ জন পরীক্ষার্থী ছিলাম। ওই স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমাদের ১৩ জন শিক্ষার্থীদের কাউকে উপবৃত্তির টাকাও দেয়া হয়নি। চকচম্পক ছোট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আমাদের ১৩ জন ছাত্রীর নামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে সেসব বিষয়ে আমরা কেউ জানতাম না। পরীক্ষার আগের দিন প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিতে গিয়ে আমরা জানতে পারি চকচম্পক ছোট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে গোটগাড়ি শহীদ মামুন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রের ১১২ নং রুমে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। আর বাকি ১০৪ জন এই স্কুলের শিক্ষার্থী হিসেবে মান্দার প্রসাদপুরে মান্দা থানা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, দৈনিক খোলাকাগজসহ একাধিক জাতীয়, স্থানীয় পত্রিকা এবং বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদটি প্রকাশের পর তদন্তের নির্দেশ দেন জেলা শিক্ষা অফিসার। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহ আলম শেখকে ওই দুই প্রতিষ্ঠানে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে ওই চিঠিতে।
তদন্তের চিঠি প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে মান্দা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহ আলম শেখ বলেন, গত সোমবার জেলা শিক্ষা অফিসার স্যারের পাঠানো চিঠি পেয়ে মঙ্গলবার ওই দুই প্রতিষ্ঠান প্রধানকে তদন্তের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হবে বলেও জানান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহ আলম শেখ।
এবিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. লুৎফর রহমান বলেন, বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ দেখার পর আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়াও চকগোপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একজন অভিভাবক গত সোমবার তার মেয়েকে ফরম পূরণ করেও প্রবেশপত্র না দেওয়ার বিষয়ে আমার দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সত্যতা পেলে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
