রাজধানীতে হওয়া ভূমিকম্পের আতঙ্কে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে ও মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন বহু মানুষ। শুধু জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র (পঙ্গু হাসপাতাল) দুপুর তিনটা পাঁচ মিনিট পর্যন্ত মোট ৬৬ জন ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া রাজধানীতে ৩-৪ জনের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে।শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ভূমিকম্প অনুভূত হলে বিভিন্ন এলাকায় মানুষজন দ্রুত ভবন থেকে নামতে গিয়ে অনেকে পড়ে যান, আবার কেউ বাসার মধ্যেই ভারসাম্য হারিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হন।
দুপুরে পঙ্গু হাসপাতালে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে আহত রোগীর ভিড়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রায় ৯০ শতাংশ রোগীই ভূমিকম্পজনিত দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।
কালাচাঁদপুর থেকে ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি দুপুর ১টার দিকে হাসপাতালে আসেন। সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নামতে গিয়ে পড়ে তার কোমরের হাড়ে গুরুতর আঘাত লাগে।
আব্দুল্লাপুরের ইয়াসিন আরাফাত দুপুর দুইটার দিকে হাসপাতালে ভর্তি হন। তার ডান হাত ভেঙে গেছে।
তিনি জানান, সকালে অফিসে কাজ করছিলাম। ভূমিকম্পের সময় হঠাৎ অফিসের আলমিরা আমার ওপর পড়ে গেলে হাত ভেঙে যায়।
নতুন বাজার বেড়াইতের তানজিমা ফেরদৌস (৪০) জানান, ভূমিকম্প শুরু হলে মাথা ঘুরে মেঝেতে পড়ে কোমরের নিচে আঘাত পান। পরে দুপুর দুইটা ৪৫ মিনিটে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসেন।
মিরপুর-৬ থেকে আসা মনিম নামের এক ব্যক্তি সিঁড়ি থেকে পড়ে তার বাম পা ভেঙে ফেলেছেন।
তার স্বজনরা জানান, ভূমিকম্পের সময় দ্রুত নিচে নামতে গিয়ে সিঁড়িতেই পড়ে যান তিনি।
নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের মুড়ি বিক্রেতা আবদুস সোবহান (৫৩) চায়ের দোকানে বসে ছিলাম। হঠাৎ মাথা ঘুরে যায়, সবাই দৌড় দিলে পড়ে গিয়ে আমার বাম পাটা ভেঙে যায়।
দুপুর ১২টার দিকে তাকে হাসপাতালে আনা হয়।
বসুন্ধরা এলাকার রাজমিস্ত্রি রবিকে দুপুর ১২টার দিকে সহকর্মীরা পঙ্গু হাসপাতালে আনেন। ভূমিকম্পের সময় নিচে পড়ে তার কোমর ও বাম পায়ে আঘাত লাগে।
রামপুরার লিজা (৪০) সিঁড়ি থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
হাতিরঝিলের রোকেয়া (৫০) সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় পড়ে তার বাম হাতের সোল্ডার জোড়া সরে গেছে বলে চিকিৎসকেরা জানান। তার সেরে উঠতে সময় লাগবে।
পঙ্গু হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স লক্ষ্মী রানী দাস জানান, দুপুর ৩টা ৫ মিনিট পর্যন্ত মোট ৬৬ জন ভূমিকম্পে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই হাত-পা ফ্র্যাকচার, কোমর ও সোল্ডার ইনজুরিজসহ বিভিন্ন অস্থি-সংক্রান্ত আঘাতে ভুগছেন।
জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালের (নিটোর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. কেনান বলেন, ‘দুপুর ১২টার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ জন আহত রোগী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছেন। এর মধ্যে ১৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে এবং বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
‘সকালে ভূমিকম্প হওয়ায় হঠাৎ রোগীর চাপ বেড়ে যায়। তাই, আমরা চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ড মাস্টারদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছি। সবাই মিলে রোগীদের সেবা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। ইনশাআল্লাহ কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। সবাই সমান চিকিৎসা পাচ্ছে।’