লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় টিসিবি কার্ড করে দেওয়ার নাম করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সারপুকুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড মধুপুরের গ্রাম পুলিশ আরিফ হোসেনের বিরুদ্ধে। টিসিবির কার্ডে নাম অর্ন্তভুক্ত না হওয়ায় সেই টাকা ফেরত চাওয়ার জেরে গ্রাম পুলিশের নেতৃত্বে পরিকল্পিতভাবে হাতে লাঠি সোটা, লোহার রড ধারালো ছোরা নিয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে।
হামলায় তার মা-ছেলেসহ তিনজন আহত হয়। আহতদের প্রথমে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তার মধ্যে সিরাজুল গুরুত্বর আহত অবস্থায় বর্তমানে রংপুর মেডিকেলে লাইফ সাপোর্টে আছে। হামলার পর থেকেই আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং ভুক্তভোগী পরিবার তীব্র নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ তুলেছে আহতদের পরিবার।
এ ঘটনায় রোববার (১৬ নভেম্বর) মূলহোতা গ্রাম পুলিশ আরিফ হোসেন, তার বাবা-মা, চাচা ও ভাইয়ের নামসহ ১০ জনের নামে আদিতমারী থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘হামলার কয়েক দিন পেরিয়ে গেলেও আসামিরা প্রকাশ্যে চলাচল ও দেশিয় অস্ত্র নিয়ে এলাকায় ঘুরছে এবং আমাদের পরিবারকে ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার ও সুবিচার চাই।’
তিনি জানান, আহতদের চিকিৎসাসেবা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণেই এজাহার দিতে কিছুটা দেরি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চার মাস আগে সারপুকুর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ সদস্য আরিফ হোসেন টিসিবি কার্ড করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলাকার বেশ কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে নেন। কার্ড না হওয়ায় টাকা ফেরতের জন্য বারবার চাপ দেওয়া সত্ত্বেও আরিফ হোসেন তা দিতে টালবাহানা করছিলেন। পরে গত বুধবার (১২ নভেম্বর) সকালে হাফিজুল ইসলামের ছোট ভাই মো. সিরাজুল ইসলাম আরিফ হোসেনের কাছে টাকা ফেরতের বিষয়ে জানতে চাইলে উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আরিফ হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে সিরাজুলকে মারধর করেন। এর কিছুক্ষণ পর গ্রাম পুলিশ আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে নবিয়ার রহমান, লোকমান আলী, সবুজ মিয়া, বদিয়ার রহমান, আব্দুর রহমান, আমিনুল ইসলাম, আসাদুল ইসলাম, মর্জিনা বেগম ও মঞ্জিলা বেগমসহ প্রায় ১০-১২ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল লাঠি, লোহার রড ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে সিরাজুলের বাড়িতে হামলা চালায়।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, হামলাকারীরা সিরাজুলকে ঘর থেকে টেনে বের করে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে গুরুতর আহত হয় সিরাজুল। ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তার মা হামিদা বেগমকেও নির্মমভাবে মারধর করা হয়, শ্লীলতাহানি করা হয় এবং তার স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে প্রতিবেশীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আহতদের অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
এলাকাবাসী জানান, গ্রাম পুলিশ আরিফ টিসিবির কার্ড দেওয়ার কথা বলে এই এলাকা থেকে আরও অনেকের কাছ থেকে ১০০০-১৫০০ টাকা করে নিয়ে আত্নসাৎ করেছে।
কেকে/ এমএ