হাতে তৈরি মুড়ি হলো এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবার, যা বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় এবং এর স্বাদ মেশিনে তৈরি মুড়ির থেকে ভিন্ন হয়। এই পদ্ধতিতে প্রথমে ধান সিদ্ধ করে রোদে শুকানো হয়, তারপর সেই চাল থেকে লবণ-পানি মিশিয়ে হাতে ভাজা হয়। তবে, আধুনিক মেশিনে তৈরি মুড়ির কারণে এর উৎপাদন কমে আসছে।
পিরোজপুরের নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলার গুয়ারেখা ইউনিয়নের ব্যাসকাঠী গ্রামে হাতে ভাজা মুড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মুড়ি তৈরীর কারিগররা। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর চালের দাম বেশি থাকায় মুড়ি বিক্রি করে খুব একটা লাভবান হচ্ছেন না কারিগররা। কোন প্রকার কেমিক্যালের মিশ্রন না থাকায় সুস্বাদু হওয়াতে এ মুড়ির বিপুল চাহিদা থাকলেও চড়া সুদে ঋণ নিয়ে এ ব্যবসায়ে টিকে থাকতে পারছে না মুড়ি ব্যবসায়ীরা।
অপরদিকে অসাধু ব্যবসায়ীরা অল্প সময়ে অনেক মুনফা নেয়ার জন্য সাধারন ক্রেতাদের মুখে বিষ তুলে দেওয়ার মতো পদার্থ (হাইড্রোজ) মিশিয়ে চিকন মুড়ি উৎপাদনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মেশিন মালিকরা।
হাতে ভাজা মুড়ির কারিগর মঞ্জু রানী সুতার, নয়ন সুতার বলেন, ‘প্রথমে চালে লবণ পানি দিয়ে ভিজিয়ে রেখে রোদে শুকাতে হয়। শুকানোর পর তা চুলার উপর মাটির পাত্রে গরম বালি দিয়ে নাড়তে হয়। এরপর মুড়ি ফুলে লাল হয়ে আসলে নামিয়ে নিতে হয়। হাতে ভাজা মুড়ি উৎপাদনে খরচ একটু বেশি।’
কিন্ত কারিগরদের দাবি মেশিনে মিশিয়ে মুড়ি উৎপাদন করে তা কম দামে বাজারে বিক্রি করায় হাতে ভাজা মুড়ির সঠিক মূল্য পাচ্ছে না মালিকরা। রমজান মাসে মুড়ি উৎপাদন করে তা বিক্রি করে পুরো বছর জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন কারিগররা।
গত বছরের তুলনায় এ বছর মুড়ির দাম বেশি। মেশিনে ভাজা যে মুড়ি আগে বিক্রি হতো ৮০-৯০ টাকায় অপরদিকে হাতে ভাজা মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০ টাকায়। হাতে ভাজা টাটকা মুড়ি স্বাদে-গুণে অনন্য হওয়া স্বত্বেও তুলনামূলক মেশিনে ভাজা মুড়ির দাম হাতে ভাজা মুড়ির চেয়ে কম হওয়ায় অধিকাংশ ক্রেতা কম দামের দিকে গুরুত্ব আরোপ করে সেইদিকে ঝুঁকছে।
মুড়ি প্রস্ততকারক কালা চাঁদ দাস, অভিনাস সুতার বলেন, ‘মুড়ি তৈরিতে যে পরিমাণ শ্রম ব্যয় হয়, সেই পরিমাণ আয় হয় না। হাইড্রোজ মেশানো মেশিনে ভাজা মুড়ি খেলে রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুকি। পুঁজির অভাবে অনেকেই ব্যবসায় করতে পারছে না।’
কারিগর ও মালিকরা সরকারের কাছে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন।
কেকে/এমএ