আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭টিতে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তবে তালিকায় রাজধানীর প্রবেশদ্বার খ্যাত ঢাকা-২০ (ধামরাই) আসনের কোনো প্রার্থীর নাম নেই।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে মনে করছেন, নাম ঘোষণা না করা আসনগুলো মিত্র দলগুলোর জন্য রাখা হতে পারে। যদিও এখনো মনোনয়নের আশা ছাড়েননি বিএনপির নেতারা।
বিগত ১২টি সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ৫বার করে আ’ লীগ ও বিএনপি এবং ২বার জাতীয় পার্টি জয় পেয়েছে। সবশেষে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিন।
আগামী নির্বাচনে তমিজ উদ্দিন মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে তমিজ উদ্দিন ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি এবং জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে এ ৪ নেতা নিজ নিজ অনুসারীদের নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিচালনা করছেন। যদিও সবাই বলছেন, দল যাকেই প্রার্থী করবে তার পক্ষেই কাজ করবেন।
সোমবার (৩ নভেম্বর) দিনভর বৈঠকের পর সন্ধ্যায় ২৩৭টি আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে দলের পক্ষ থেকে তালিকা প্রকাশ করা হয়। ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হলেও ঢাকা-২০সহ ৭টি আসনে কোনো নাম ঘোষণা করা হয়নি।
এ বিষয়ে কথা বলতে তমিজ উদ্দিনকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি। তবে তার সহযোগী ও ধামরাই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম বলেন, ‘এটা দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। হয়তো কোনো কারণে বাদ পড়েছে। সিদ্ধান্ত তো হবেই। আমরা আশাবাদী। মাঠ তমিজ উদ্দিনের পক্ষে। বিএনপির সবাই মূল দলের। আর আমরাই মূল দল। তারপরও নেতৃবৃন্দ আছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আছেন, তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা শতভাগ আশাবাদী।’
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মনোনয়ন প্রত্যাশী সুলতানা আহমেদ বলেন, ‘আমি বর্তমানে দেশে নেই, ওমরাহ করতে এসেছি। ওখানে থাকলে হয়তো আরও ভালো বলতে পারতাম। সিদ্ধান্তটি হয়তো আরও গভীরভাবে যাবে, সেজন্যই এমনটি হয়ে থাকতে পারে। আমি মনোনয়ন আশা করি, আমি আশাবাদী।’
মনোনয়নের আশায় আছেন আরও তরুণ ২ নেতা। তারা বলছেন, ‘দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’
ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ বলেন, ‘দলের নিজস্ব চিন্তা চেতনার পরিকল্পনা রয়েছে। সেভাবেই সিদ্ধান্ত হবে। আমি শতভাগ আশাবাদী। দল যখন ঘোষণা করবে, সবাই জানবে। আমি দলের আদর্শ ও নেতৃত্বের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধাশীল, সেটা ধরে রেখে রাজনীতি করছি। ভবিষ্যতেও সেটা অব্যাহত থাকবে।’
ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি বলেন, ‘দল তারুণ্যের পক্ষে। আমি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। সেজন্য কাজ করছি। আশা করছি, দল ঢাকা-২০ আসনে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে আমাকে মনোনীত করবে।’
এদিকে বিএনপির ৪জন মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও অন্যান্য দলগুলো তুলনামূলকভাবে নির্ভার। ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আব্দুর রউফ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আসাদুল ইসলাম মুকুল, গণ অধিকার পরিষদের রুবেল এবং এবি পার্টির লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন আহাম্মদ প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন।
ইতিহাস বলছে, প্রথম থেকে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত ধামরাই উপজেলা ছিল ঢাকা-১৩ আসনের অন্তর্ভুক্ত। ১৯৭৩ সালের প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী হন আ’ লীগের তাজউদ্দীন আহমদ, ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনে বিএনপির দেওয়ান মোহাম্মদ ইদ্রিস, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির খান মোহাম্মদ ইসরাফিল এবং ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে টানা ৩বার বিজয়ী হন বিএনপির ব্যারিস্টার মো. জিয়াউর রহমান খান।
২০০৮ সালে আসন পুনর্বিন্যাসের পর ধামরাই হয় ঢাকা-২০ আসন। সেই নির্বাচনে বিজয়ী হন আ’ লীগের বেনজির আহমদ। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয় পান এম এ মালেক। এরপর ২০১৯ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে আবারও বিজয়ী হন বেনজীর আহমদ।
কেকে/বি