পার্বত্য জেলা বান্দরবানে সারা বছর জুড়েই রয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। মাটির নীচের স্থরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির লেয়ার না থাকা, দুর্গম এলাকা হওয়ায় বিভিন্ন এলাকার মাটি পাথুরে হওয়ায় পানির উৎস কম থাকা আর বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়ায় পানির সংযোগ না থাকায় দিন দিন বান্দরবানে এই পানির কষ্ট চরম আকার ধারণ করেছে।
এদিকে এবার এই পানি সংকট মোকাবিলায় প্রায় ৩৫০কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশাবাদ করছে সঠিকভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে বান্দরবানে পর্যাপ্ত সুপেয় পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে আর সেই সাথে স্যানিটেশন ব্যবস্থাও আরো উন্নত হবে।
দুর্গম পার্বত্য জেলা বান্দরবান। এই জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় পাহাড় আর টিলায় বড়পূর। যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্গমতা আর নানা প্রতিকুলতার কারণে বান্দরবানে সুপেয় পানির কষ্টে দিনযাপন করছে অসংখ্য জনগণ। গ্রীষ্মকালে নদী, ছড়া, ঝিড়ি শুকিয়ে পানির তীব্র সংকটের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় পৌর পানির সরববরাহ ব্যবস্থায় মোটর ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বিকল হয়ে পানি সরবরাহে ঘটে নানা বিপত্তি। আর তাই বান্দরবানের জনগণের জন্য সার্বক্ষণিক সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এর অর্থায়নে বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে “পার্বত্য চট্টগ্রামে সমন্বিত ও টেকসই পৌর পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ” নামে প্রায় ৩৫০কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।
দীর্ঘদিন পরে বান্দরবানবাসীর জন্য সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এমন প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় খুশি এলাকাবাসী, দ্রুত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করে এর সুফল ভোগ করতে চায় সাধারণ জনগণ।
বান্দরবান পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সবুজ দত্ত বাচ্চু বলেন,বান্দরবান প্রচুর পানির কষ্ট, আর এই পানির কষ্ট লাগব করা প্রয়োজন। বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে “পার্বত্য চট্টগ্রামে সমন্বিত ও টেকসই পৌর পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ” এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বান্দরবানবাসী অনেক উপকৃত হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।
বান্দরবান পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মেনু মার্মা বলেন, বান্দরবানে পানির কষ্ট সবচেয়ে বেশি, বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় পানি নেই বললেই চলে, আর সমতলে পৌর এলাকায় সব সময় পানি পাওয়া যায় না। তিনি আরো বলেন, আমাদের এলাকায় পৌর পানির লাইন সংযোগ নেই ,এবার যদি লাইন পাই তবে ভালো হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছে আগামীতে প্রকল্পের প্রকৃত সুফল পেতে এবং পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রকল্পের কাজ শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সেই সাথে প্রকল্পে ব্যবহৃত সকল সামগ্রীর গুণগত মান যাতে ভালো হয় সেদিকে সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ নজরদারি দিতে হবে।
পৌরসভার বনরুপা পাড়ার বাসিন্দা সুজন দেবনাথ বলেন, নতুন প্রকল্পের দৃশ্যমান কাজ দেখে আমরা আনন্দিত, তবে এই কাজ শতভাগ যাতে ভালো হয় সেটা লক্ষ্য রাখা উচিত। নতুন এই প্রকল্পে সকলের বাড়িতে বাড়িতে মিটার স্থাপন করা হবে আর সার্বক্ষণিক পানি পাওয়া যাবে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত খুশির সংবাদ।
এদিকে প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা বলছে বান্দরবানের একমাত্র পানির উৎস সাংগু নদী, আর এই নদীর পানিকে পরিশোধন করে দীর্ঘস্থায়ী টেকসই পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করে পানির গ্রাহকদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে, আর এই প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে বান্দরবানের দীর্ঘদিনের পানির সমস্যা লাগব হবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বান্দরবান এর নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম দে জানান, বান্দরবানবাসীর পানির চাহিদা মেটানো এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা মেটানোর জন্য এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ২০২৩ সালের ১জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর ২০২৮ সাল, আর এই প্রকল্পের মাধ্যমে বান্দরবান পৌরসভার ৯টি ও লামা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে সুপেয় পানি সরবরাহ ও আধুনিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আরো জানান,বান্দরবানে বিভিন্ন এলাকায় নলকুপ হয় না, আর যেগুলো হয় সেগুলোতে পর্যাপ্ত পানি জমে না, তাই বান্দরবানবাসীর এই কষ্ট লাগবে আমাদের এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকলেপর মাধ্যমে পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে নতুন এইচডিপি পাইপ বসানোর কাজ চলমান রয়েছে, আর চাইঙ্গার দানেশ পাড়ায় প্রায় ৪একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে এবং সেখানে একটি ওয়াটার টিট্রমেন্ট প্ল্যাট স্থাপন শেষে পুরোদমে বান্দরবানে পানি সরবরাহ শুরু হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সমন্বিত ও টেকসই পৌর পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন এর প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল হাসান জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বান্দরবানের পানির কষ্ট অনেকটাই কমে যাবে এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা আগের চাইতে আরো উন্নত হবে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে একদিন বা ২দিন পরপর বান্দরবানে বিভিন্ন এলাকায় পৌর পানি সরবরাহ করা হয়,আর নতুন এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সার্বক্ষণিক পানি সরবরাহ চালু থাকবে।
কেকে/এআর