পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতে জঙ্গল সলিমপুরে শিগগিরই যৌথবাহিনী সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করবে বলে জানিয়েছেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফখরুল ইসলাম।
তিনি বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টায় উপজেলা হলরুমে মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ তথ্য জানান।
সভায় উপস্থিত ছিলেন—উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন, মডেল থানার ওসি মুজিবুর রহমান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন, বিএনপি-জায়ামাত নেতাবৃন্দ ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা।
সভায় ইউএনও ফখরুল ইসলাম সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের দমনে কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা দেন। এছাড়া সীতাকুণ্ড অঞ্চলে মাদক নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযান চালানো হবে বলেও জানান।
সভায় সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য জঙ্গল সলিমপুরে অবাধ বিচরণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর এই দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলটি আওয়ামী লীগের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের নিরাপদ অভয়ারণ্য ও আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের কতিপয় আওয়ামী-পদধারী এবং সহযোগী সাংবাদিকদের সাথে জঙ্গল সলিমপুরে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের যোগসাজশ রয়েছে। জঙ্গল সলিমপুরে পালিয়ে থাকা আওয়ামী সন্ত্রাসীরা শিল্পাঞ্চল সীতাকুণ্ডে যেকোনো সময় নাশকতাসহ বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে বলে সচেতন মহল আশঙ্কা করছে।
জহিরুল ইসলামের এই উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনও ফখরুল ইসলাম শিগগিরই জঙ্গল সলিমপুরে যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দেন।
এছাড়া সভায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন স্বাস্থ্য সেবার করুণ চিত্র তুলে ধরেন। তিনি স্পষ্ট জানান, সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উন্নয়ন রাজনৈতিক ঘোষণার বেড়াজালে আটকে আছে। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সাবেক এমপি এসএমআল মামুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণের ঘোষণা দিলেও অবকাঠামো, জনবল ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনার অভাবে তা কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এটিকে তিনি একটি রাজনৈতিক ঘোষণা হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ বছর যাবত অর্থোপেডিক্স ডাক্তারের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় সীতাকুণ্ডে একটি অত্যাবশ্যকীয় ট্রমা সেন্টার না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত গুরুতর রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চরম বিপাকে পড়ছে। ফলস্বরূপ, আহতদের জীবন বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে প্রায়শই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করতে হচ্ছে।
তিনি অর্থোপেডিক্স ডাক্তারের শূন্য পদ পূরণের পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি ট্রমা সেন্টার চালুর জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার আশ্বাস দেন।
এদিকে সীতাকুণ্ড মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুজিবুর রহমান জানান, মহাসড়কে ডাকাতি নিয়ন্ত্রণে এলেও যানজট এখনো একটি বড় সমস্যা। তিনি যানজট নিরসনে উপজেলা প্রশাসন, থানা প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশকে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।
এ সময় সহকারী ভূমি কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন যানজটের মূল কারণ হিসেবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর কন্টেইনার ডিপোর গাড়ির অবৈধ পার্কিংকে দায়ী করেন। তিনি উল্লেখ করেন, বিএম কন্টেইনার ডিপোর গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও পোর্ট লিঙ্ক কন্টেইনার ডিপোর গাড়িগুলো এখনো যানজট সৃষ্টি করছে।
সভায় ইউএনও ফখরুল ইসলাম স্কুল চলাকালীন শিক্ষকদের অনুপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে অনুপস্থিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। পাশাপাশি সীতাকুণ্ড পৌরসভায় মহাসড়কের পাশে ময়লার স্তূপ ও ডাস্টবিন থেকে যেন জীবাণু না ছড়ায়, সেজন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
কেকে/ আরআই