কামরাঙা একটি রসালো টক-মিষ্টি ফল, যা ইংরেজিতে স্টার ফ্রুট নামেও পরিচিত। শরতের শীতে পাওয়া যায় এ ফল। যদিও শীত এখনো আসি আসি করছে, আসেনি। কিছু দিনের মধ্যেই শুরু হবে শীতের হাতছানি। এ সময় বাজারে পাওয়া যায় তারার মতো দেখতে টক ফল– কামরাঙা। তবে পাকলে এর টক স্বাদ অনেকটাই কমে আসে। কামরাঙা দেখতে যেমন সুন্দর, স্বাদ আর পুষ্টিগুণেও তেমনই অসাধারণ।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ-প্রশান্ত অঞ্চলের স্থানীয় একটি ফল। এটি ভিটামিন ‘সি’, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবারের মতো পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে কামরাঙা। এই উপাদানগুলো শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হজম ও বিপাকক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে কিডনি রোগীদের অতিরিক্ত পরিমাণে কামরাঙা খাওয়া উচিত নয়। কারণ এটি তাদের জন্য ব্যাপক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
কামরাঙা কাঁচা কিংবা পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। এটি ভর্তা, চাটনি কিংবা রান্না করেও খাওয়া যায়। এতে থাকা প্রাকৃতিক অর্গানিক অ্যাসিড পাকরস নিঃসরণ বাড়ায়। ফলে খাবার দ্রুত হজম হয়। অনেক ফলেই ভিটামিন সি থাকে, কিন্তু কামরাঙার বিশেষত্ব হলো— এতে উচ্চমাত্রার পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম—দুটি উপাদানই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
এ বিষয়ে আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনের গবেষণায় দেখা গেছে, কামরাঙার মতো পটাসিয়ামসমৃদ্ধ ফল নিয়মিত খেলে রক্তনালির সংকোচন কমে যায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। এ ছাড়া কামরাঙায় থাকা টক যৌগগুলো পাকস্থলীর এনজাইম সক্রিয় করে, যা খাবার ভাঙার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে এবং গ্যাস–অম্বল কমিয়ে দেয়।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ নয়, খনিজে সমৃদ্ধ ফল কামরাঙা। অন্য টক ফলের তুলনায় কামরাঙায় ভিটামিন সি তুলনামূলকভাবে কম, কিন্তু এতে খনিজ উপাদান বেশি। পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও সামান্য আয়রন শরীরের কোষের কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে। সে কারণে এটি শারীরিক ভারসাম্য রক্ষায় এবং ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
এ ছাড়া ওজন ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখে কামরাঙা। কারণ কামরাঙার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো— এর অত্যন্ত কম ক্যালোরি ও চিনি। জার্নাল অব নিউট্রিশনাল বায়োকেমিস্ট্রির গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, এতে থাকা পলিফেনল ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং শর্করার শোষণ ধীর করে। তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ফল।
তবে কামরাঙায় থাকা অক্সালিক অ্যাসিড, যা কিডনির কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলতে পারে। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল কিডনি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, কিডনি রোগীরা বেশি পরিমাণ কামরাঙা খেলে বিষাক্ত যৌগ জমে যেতে পারে, যা ক্ষতিকর। তাই যাদের কিডনি দুর্বল, তাদের এ ফল খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কেকে/ এমএস