ইসলামী আইন অনুসারে শুধু রাষ্ট্রপ্রধানই স্বদেশি মুদ্রা চালু করার অধিকার সংরক্ষণ করে থাকেন। রাষ্ট্রপ্রধান মুদ্রা ব্যবস্থাপনার জন্য এমন ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান করবেন যাকে আর্থিক লেনদেন ও মুদ্রা বিনিময়ের ক্ষেত্রে খাদযুক্ত মুদ্রা থেকে খাদহীন মুদ্রা শনাক্ত করতে হবে। রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতা বলে মুদ্রাব্যবস্থাকে ভেজালমুক্ত করবে এবং মুদ্রায় জনগণ শনাক্ত করতে পারে রাষ্ট্রপ্রধানের এমন সিলস্বাক্ষর সংযুক্ত করবে। মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি মুদ্রার আকার-ওজন-পরিমাণ ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া আবশ্যক।
উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক বিন মারওয়ানের আমলে মুদ্রাব্যবস্থার আকার, সংখ্যা ইত্যাদি প্রথমবারের মতো সুনির্দিষ্ট করা হয়েছিল।
রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়া অন্য কারো পক্ষে মুদ্রা প্রস্তুত করা এবং ছাপিয়ে বাজারে তা চালু করা বৈধ নয়। অন্য কেউ এমন কাজ করলে রাষ্ট্রপ্রধান দোষী ব্যক্তিকে উপযুক্ত শাস্তি বিধানের অধিকার সংরক্ষণ করেন। দোষী ব্যক্তি রাষ্ট্র কর্তৃক প্রবর্তিত মুদ্রার ব্যতিক্রম মুদ্রা চালু করুক অথবা রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক প্রবর্তিত মুদ্রার অবিকল মুদ্রা তথা জাল মুদ্রা তৈরি করে বাজারে ছাড়ুক—উভয় অবস্থায়ই ব্যক্তিটি অন্যায়কারী ও শাস্তিযোগ্য বলে গণ্য হবে।
এমনটি ব্যক্তি রাষ্ট্র কর্তৃক প্রবর্তিত মুদ্রার চেয়ে উত্তম ও খাঁটি স্বর্ণ-রৌপ্যের মুদ্রা চালু করলেও কাজটি অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত হবে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেন, সুলতান তথা রাষ্ট্রপ্রধানের অনুমতিক্রমে শুধু টাকশালে দিরহাম তৈরি করা হবে। অন্য কেউ কোনো মুদ্রা চালু করতে পারবে না। কেননা প্রজাসাধারণকে এ বিষয়ে অনুমতি দেওয়া হলে এতে তারা জঘন্য অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়বে।
মুদ্রা ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো রাষ্ট্রপ্রধান এক দিরহাম থেকে কম মূল্যমানের খুচরা পয়সাও প্রবর্তন করবেন, যাতে জনসাধারণ এসব খুচরা মুদ্রার মাধ্যমে ছোট ছোট আর্থিক লেনদেনও করতে পারে। এ ক্ষেত্রে তামা বা এমন ধাতব পদার্থ ব্যবহার করা উচিত, যেগুলো সচরাচর ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য একটি জরুরি কাজ হলো তিনি তাঁর অধীন প্রজাসাধারণের লেনদেনে সহজতার জন্য ন্যায়ভিত্তিক মূল্যমানের খুচরা মুদ্রা চালু করবেন।
মুদ্রায় ইসলামী স্থাপত্য ও ইসলামের নানা বাণী অঙ্কিত করা বৈধ। কেননা পূর্ববর্তী যুগের মুসলিম শাসকরা তা করেছেন এবং আলেমরা তার প্রতিবাদ করেননি।
ইমাম মাকরিজি (রহ.) বলেন, ওমর (রা.) তাঁর শাসনামলে রৌপ্যমুদ্রায় হুবহু কিসরার ছাপ দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি এগুলোর কোনোটিতে ‘আল হামদুলিল্লাহ’, কোনোটিতে ‘রাসুলুল্লাহ’, কোনোটিতে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ আবার কোনোটিতে ওমর শব্দ ও বাক্য বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে উসমান (রা.) খলিফা হওয়ার পর রৌপ্যমুদ্রাগুলোতে ‘আল্লাহু আকবর’ অঙ্কিত করেন। আবদুল্লাহ বিন জুবায়ের (রা.) মক্কা ও এর আশপাশে খিলাফত কায়েম করার পর রৌপ্যমুদ্রাগুলোকে গোলাকার আকৃতি দেন এবং এগুলোর এক পিঠে ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ এবং অপর পিঠে ‘আল্লাহ অঙ্গীকার পূরণ ও ন্যায়ানুগ থাকার আদেশ করেছেন’ খোদাই করেছিলেন।
উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক বিন মারওয়ান ইসলামী মুদ্রাব্যবস্থাকে পূর্ণতা দান করেন। তিনি খলিফা হওয়ার পর মুদ্রার ওজন, পরিমাপ ও আকৃতি স্থায়ীভাবে ঠিক করে দেন। তিনি নিজস্ব স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা চালু করেন এবং ইসলামী খিলাফতের সর্বত্র তা ব্যবহারের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি রোমান মুদ্রা ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন। তিনি প্রতি মাসে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা চালুকৃত মুদ্রার হিসাব সংরক্ষণেরও নির্দেশ দেন।
কোরআনের আয়াত বা আয়াতাংশ খচিত মুদ্রা অজুহীন অবস্থায় ছোঁয়া ও বহন করা যাবে কি না, তা নিয়ে ফকিদের ভেতর মতভিন্নতা আছে। বেশির ভাগ ফকিহের মতে, এমন মুদ্রা অজুহীন অবস্থায় ছোঁয়া ও বহন করা হারাম নয়। তবে কেউ কেউ এটাকে মাকরুহ আবার কেউ কেউ এটাকে হারামও বলেছেন।
কেকে/ আরআই