# দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে হাসপাতালজুড়ে # চিকিৎসক ও জনবলসহ শূন্য পদ ৫০টি
চিকিৎসক, ওষুধ ও জনবল সংকটসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন নিজেই রোগীতে পরিণত হয়েছে। ৪ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিনিয়িত সরকারি চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা চেরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। নামে ৫০ শয্যা হাসপাতাল হলেও প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক-নার্সদের।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা যায়, হাসপাতালে চিকিৎসক, মেডিকেল অফিসার, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নিরাপত্তা প্রহরীসহ বিভিন্ন পদে ৫০টি পদ এখনো শূন্য রয়েছে। হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার ৭ বছরে নিয়োগ দেওয়া হয়নি প্রয়োজনীয় জনবলও।
সরেজমিন দেখা যায়, হাসপতালের শয্যা সংখ্যা বাড়লেও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হয়নি। নেই হাসপাতালের আধুনিক ভবন, শয্যা, জেনারেটর, পানির ট্যাংকি, চিকিৎসা সরঞ্জাম, পর্যাপ্ত ওষুধ, নিয়মিত সিজারিয়ান অপারেশন। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ রোগী ও দর্শনার্থীরা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে ছড়িয়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা। সিঁড়ি থেকে শুরু করে ওয়ার্ড ও জানালার পাশে জমে আছে পলিথিন, পরিত্যক্ত খাবার, ব্যবহৃত সিরিঞ্জসহ নানা আবর্জনা। এসব ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট ব্যবস্থা না থাকায় রোগী, স্বজন ও নার্সরাই জানালা দিয়ে বাইরে ফেলছেন। ফলে নিচে তৈরি হয়েছে ময়লার ভাগাড়। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে হাসপাতালজুড়ে। জরাজীর্ণ ভবনের ছাদ দিয়ে পড়ছে বৃষ্টির পানি, ধসে পড়ছে পলোস্তার। চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালের বহির্বিভাগ চালাচ্ছেন উপসহকারী মেডিকেল অফিসাররা। হাসপাতালের যথাযথ সেবা না পেয়ে অধিকাংশ রোগী চলে যাচ্ছেন স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে।
এ ছাড়া হাসপাতালে গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়ার অভাবে দীর্ঘদিন ধরে। হাসপাতালটিতে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ রয়েছে। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে টাকা দিয়ে অপারেশন করাচ্ছেন।
উপজেলার মাধবপুর এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সামছুদ্দিন নামে এক রোগী বলেন, ‘হাসপাতালে গাইনি অপারেশনব বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এক্সরে মেশিন কোনো কাজ করে না। বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে সিজার ও এক্সরে করাতে হয়। আমরা কোনো ওষুধ হাসপাতাল থেকে পাইনি। একজন উপসহকারী মেডিকেল অফিসার স্লিপ দিয়ে বললেন বাইরে থেকে ওষুধ কিনে নিবেন।’
ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ রোগী ও দর্শনার্থীরা
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শাফিয়া নামে এক রোগী বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই জরাজীর্ণ ভবনের ছাদ দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে। এছাড়া মাঝেমধ্যে ধসে পড়েছে পলেস্তার। বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারে থাকে রোগীরা। বহু সময় মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখতে হয়। আমাদের এই হাসপাতাল নিজেই যেনো রোগী হয়ে পড়েছে।’
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নানা সংকটের সুযোগ নিচ্ছে সক্রিয় দালাল চক্র। ওই চক্র হাসপাতালে আসা রোগীদের নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রাইভেট ক্লিনিকে। ফলে তারা বিভিন্ন সময় অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের আশেপাশে একাধিক ব্যক্তি জানান, হাসপাতালের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া ৬ বছর ধরে এই হাসপাতালে আছেন। কিন্তু এই ৬ বছর ধরে হাসপাতালের কোনো উন্নতি হয়নি। তার ব্যক্তিগত আয়-উন্নতি হয়েছে। এখানে প্রচুর জায়গা জমি তিনি কিনেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা হাসনাত আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া ও স্যানেটারি অফিসার দুলাল মিয়াকে এখান থেকে বদলি করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘অল্প চিকিৎসক ও জনবল দিয়ে চিকিৎসা সেবা চালানো খুবই কঠিন। হাসপাতালে মোট ৫০টি পদ শূন্য রয়েছে। চিকিৎসক ও কনসালটেন্টের ১৯টি পদেই শূন্য ৮ পদ। জনবল সংকটের মধ্যে রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হয়েছে। জনবল পূরণের প্রক্রিয়া চলছে।’
এদিকে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের দাবিতে সম্প্রতি মানববন্ধন করেছে কমলগঞ্জ সামাজিক সংগঠন ঐক্য পরিষদ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। হাসপাতালের আধুনিক ভবন, শয্যা, জেনারেটর, পানির ট্যাংকি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকা সত্বেও সেগুলো কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। অপারেশন থিয়েটার থাকলেও সিজার সেবা চালু হয়নি। সরকারি ওষুধ প্রায়শই অপ্রতুল বা ভেজাল। যার কারণে রোগীরা প্রাইভেট ক্লিনিক বা দূরের হাসপাতালে ছুটতে বাধ্য হচ্ছেন। সামান্য চিকিৎসার জন্য গেলেও জেলা শহর হাসপাতালে রেফার করা হয় রোগীদের।’