রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫,
২৭ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
আন্তর্জাতিক
বাংলাদেশ-নেপালের পর এবার উদ্বিগ্ন ভারত
খোলা কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:০৩ পিএম
সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের জেরে সহিংস বিক্ষোভে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির পতন ঘটেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর অস্থিরতায় উদ্বিগ্ন ভারত। বিবিসি বলছে, পরবর্তীতে এমন রাজনৈতিক অস্থিরতা ভারতে তৈরি হতে পারে।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হিংস আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটা তৃতীয় দেশ হচ্ছে ভারতের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী নেপাল। প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন।

দেশজুড়ে কারফিউ জারি রয়েছে এবং সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করছে। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনে হামলা চালিয়েছে এবং কয়েকজন রাজনীতিকের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

কাঠমান্ডুর এই দৃশ্য অনেকের কাছে গত বছর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার অভ্যুত্থানের সময়কার চিত্র স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।

যদিও বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাও ভারতের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী, তবে নেপালের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত কারণে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। নেপালের সঙ্গে ভারতের প্রায় ১ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার উন্মুক্ত সীমান্ত রয়েছে। আর এই সীসান্ত মূলত উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, সিকিম, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে।

সীমান্তের ওপারের ঘটনাপ্রবাহে ভারত গভীর নজর রাখছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক্সে লিখেছেন, “নেপালের সহিংসতা হৃদয়বিদারক। এত তরুণ প্রাণহানিতে আমি মর্মাহত”। তিনি আরো বলেন, “নেপালের স্থিতিশীলতা, শান্তি ও সমৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি।”

গত মঙ্গলবার তিনি মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকও করেছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যেমনভাবে ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভারত অপ্রস্তুত হয়েছিল, তেমনি নেপালের এই পরিস্থিতিও তাদের বিস্মিত করেছে। বিশেষ করে ওলির দিল্লি সফরের ঠিক এক সপ্তাহ আগে তার পদত্যাগ ঘটনাটিকে আরো তাৎপর্যপূর্ণ করেছে।

নেপালের অস্থিরতা ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ। কারণ দেশটির কৌশলগত অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড নেপালের সীমানার ওপারেই অবস্থান করছে। ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমিতে প্রবেশের পথ সরাসরি নেপালের ভেতর দিয়ে গেছে।

অস্থিরতা প্রভাব ফেলছে ভারতের অভ্যন্তরেও। কারণে ভারতে প্রায় ৩৫ লাখ নেপালি বসবাস বা কাজ করেন। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। দুই দেশের মধ্যে রয়েছে গভীর পারিবারিক সম্পর্ক ও অবাধ যাতায়াত। ভিসা বা পাসপোর্ট ছাড়াই নেপালি নাগরিকরা ভারতে যেতে ও কাজ করতে পারেন। পাশাপাশি, নেপালের প্রায় ৩২ হাজার গুর্খা সেনা বিশেষ চুক্তির আওতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত।

নেপাল হিন্দু ধর্মীয় ঐতিহ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের হাজারো হিন্দু ভক্ত প্রতিবছর মুকতিনাথসহ নেপালের বিভিন্ন মন্দিরে তীর্থযাত্রায় যান। ভারতের সঙ্গে নেপালের বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৮.৫ বিলিয়ন ডলার। মূলত কাঠমান্ডু তেল ও খাদ্যপণ্যের জন্য ব্যাপকভাবে ভারতের ওপর নির্ভরশীল।

যদিও বুধবার কিছুটা শান্ত পরিস্থিতি ফিরে এসেছে, তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতকে এখন অত্যন্ত সতর্ক কূটনৈতিক কৌশল অবলম্বন করতে হবে। কারণ বিক্ষোভকারীরা নেপালের তিন প্রধান রাজনৈতিক দলের — ওলির নেতৃত্বাধীন সিপিএন–ইউএমএল, শের বাহাদুর দেউবার নেপালি কংগ্রেস এবং পুষ্পকমল দাহাল প্রচণ্ডর নেতৃত্বাধীন সিপিএন (মাওবাদী কেন্দ্র) — সবকটির বিরুদ্ধেই ক্ষুব্ধ।

ভারত ও চীন উভয়েই নেপালে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে, যা নিয়ে দুই দেশের ওপরই নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠছে। ওলির উত্তরসূরী কী ধরনের সরকার গঠন করবেন, তা স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত এখন খুবই সতর্ক থাকবে। তারা নেপালে বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি চায় না।

২০১৯ সালে ভারতের নতুন মানচিত্রে বিতর্কিত সীমান্ত অঞ্চল নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করায় নেপাল ক্ষুব্ধ হয়েছিল। পরে নেপালও পাল্টা মানচিত্র প্রকাশ করে। সম্প্রতি ভারত ও চীন ওই বিতর্কিত সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্য পুনরায় শুরুতে সম্মত হয়েছে, যা নিয়ে ওলি চীনা নেতৃত্বের কাছে আপত্তি জানিয়েছিলেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের উচিত নতুন নেপালি নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ তরুণ প্রজন্মকে পাশে টানা। এর জন্য শিক্ষাবৃত্তি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো প্রয়োজন।

দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) দীর্ঘদিন অকার্যকর থাকায় ভারতের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর এই অস্থিরতা মোকাবিলা করা আরো কঠিন হয়ে পড়ছে। কারণ পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তলানিতে, বাংলাদেশের সঙ্গে দিল্লির টানাপোড়েন চলছে এবং মিয়ানমার গৃহযুদ্ধে জর্জরিত।

ভারতীয় বিশেষজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অশোক মেহতা মন্তব্য করেছেন, “ভারত তার বৃহৎ শক্তি হওয়ার স্বপ্নে মগ্ন, কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আগে নিজের প্রতিবেশে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”

কেকে/এআর
আরও সংবাদ   বিষয়:  বাংলাদেশ   নেপাল   উদ্বিগ্ন ভারত  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ

সর্বাধিক পঠিত

চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
কালাইয়ে বিএনপির গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
ফতুল্লায় ঝগড়া থামাতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের

আন্তর্জাতিক- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close