নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ভৈরব-আশুগঞ্জ মেঘনা নদীর আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা থেকে দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। প্রতিদিন ১০-১২টি লোড ড্রেজারের মাধ্যমে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা কয়েক লাখ ঘনফুট বালি উত্তোলন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে তারা। এতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও হুমকির মুখে পড়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, জাতীয় গ্রীড লাইনের টাওয়ার এবং চর সোনারামপুর গ্রাম।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও জাতীয় গ্রীড লাইনের দুটি টাওয়ার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এতে আশুগঞ্জ থেকে উত্তরবঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি দেশ মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে। অন্যদিকে চর সোনারামপুর গ্রামের শত শত পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে। তাই জাতীয় স্বার্থে অবিলম্বে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
তথ্যসূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে বালু সরবরাহের জন্য মীর আক্তার কোং ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের অনুমোদন পায়। সে সময় প্রায় ৩৭ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হয়। তবে গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর কোম্পানিটি বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। কিন্তু বর্তমানে ওই কোম্পানির নাম ব্যবহার করে একটি চক্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশের নদী অংশে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আশুগঞ্জের চর সোনারামপুর গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, আমাদের গ্রামের কাছ থেকে প্রতিদিন বালু তোলা হচ্ছে। এতে আমরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। দ্রুত বালু উত্তোলন বন্ধ করা হোক।
এ বিষয়ে আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালক (টেকনিক্যাল) আবদুল মজিদ বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছাকাছি নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হলে নদীভাঙনে ক্ষতির আশঙ্কা আছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে সারাদেশের গ্রাহক ক্ষতির মুখে পড়বে। বালু উত্তোলন বন্ধ করা আমাদের কাজ নয়, প্রশাসনের উদ্যোগ নিতে হবে।
ভৈরব বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রের প্রকৌশলী মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আমরা বিদ্যুৎ পাই। কেন্দ্রটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভৈরবসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হবে।’
অন্যদিকে, মীর আক্তার কোং-এর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিত বাবু বলেন, কারা আমাদের নাম ব্যবহার করছে, তা আমরা জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে সত্যতা মিললে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেকে/ এমএস