মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় কথিত এক জীনের বাদশার ফাঁদে পড়ে ২০ লক্ষ টাকার অর্থ-সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব প্রবাসীর পরিবার। বাধ্য হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তারা।
খবর নিয়ে জানা যায়, গজারিয়া উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের বালুরচর গ্রামের সৌদিআরব প্রবাসী রবিউল আলমের একমাত্র মেয়ে ফারিয়ার বিয়ে হয় নারায়ণগঞ্জের চর কিশোরগঞ্জ এলাকার ইয়ামিনের সাথে। শ্বশুর বাড়িতে থাকা অবস্থায় গত ২৫ আগস্ট দিবাগত রাত সাড়ে বারোটার দিকে তার মোবাইলে কল দেয় কথিত এক জীনের বাদশা। আর কথা মত চললে তাকে স্বর্ণের পুতুল,সোনা-রুপার কলস ও ধন- সম্পত্তি দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। প্রথমে বিষয়টি বিশ্বাস না করলেও পরবর্তীতে তিনি সেটা বিশ্বাস করে তার মা পরীবানুকে জানান। এরপর কথিত জীনের বাদশাকে তিনি তার মা পরীবানুর পরিচয় করিয়ে দিলে তাদের মধ্যে কথাবার্তা এগোতে থাকে।
এরপর গত মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাতে কথিত জীবনের বাদশা পরীবানুকে ফোন করে স্বর্ণের পুতুল দেওয়ার কথা বলে পরেরদিন বুধবার সকালে গজারিয়া উপজেলা পরিষদের সামনে যেতে বলে। পরদিন বুধবার (২৭ আগস্ট) সকালে তিনি সেখানে গেলে মসজিদের পাশের একটি গাছের তলা থেকে তিনি চিপসের প্যাকেটে লাল কাপড় দিয়ে মোড়া একটি পুতুল উদ্ধার করেন। তাকে বলা হয় বাসায় গিয়ে গভীর রাতে প্যাকেটটি খুলে দেখতে। তিনি গভীর রাতে প্যাকেট খুলে কাঁসার তৈরি পুতুলটি স্বর্ণের বলে বিশ্বাস করেন। এইদিন রাতে তাকে সোনা ও রুপার কলস দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মা-মেয়ের সকল স্বর্ণালংকার প্লাস্টিকের কাগজে মুড়িয়ে গজারিয়া উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন একটি আম গাছের নিচে রাখতে বলা হয়।
তার কথামত পরেরদিন বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) মা-মেয়ে মিলে তাদের ১৭ ভরি স্বর্ণালংকার সেখানে রেখে আসেন। এদিকে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে খরচ বাবদ মা-মেয়ের কাছ থেকে তিনবারে বিভিন্ন বিকাশ নাম্বারে এক লক্ষ টাকা নেওয়া হয়। তারপর থেকে কথিত জীনের বাদশার মোবাইল নাম্বার বন্ধ দেখলে বিষয়টি তাদের সন্দেহ হয়। পরবর্তীতে পুতুলটি তারা স্থানীয় স্বর্ণকারের দোকানে নিয়ে গেলে জানতে পারেন সেটি সোনার নয় কাঁসার তৈরী। বিভিন্নভাবে কথিত ওই জীনের বাদশার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে তারা বুঝতে পারেন তারা প্রতারিত হয়েছেন। বাধ্য হয়ে শনিবার (৩০ আগস্ট) রাত আটটার দিকে গজারিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তারা।
ভুক্তভোগী ফারিয়া আক্তার বলেন, ‘বিষয়টি আমি বুঝতে পারিনি। এরকম ঘটনা আমার সাথে প্রথম ঘটলো। পুরো বিষয়টি তিনি যেভাবে উপস্থাপন করেছিলেন আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছি। তারপরও আমার ভয় ভয় লাগায় আমি আমার মায়ের সাথে ওনার পরিচয় করিয়ে দেই।’
বিষয়টি সম্পর্কে ভুক্তভোগী পরীবানু বলেন, ‘আমি সরল মনে তার কথা বিশ্বাস করেছিলাম। স্বর্ণের পুতুল পাওয়ার পরে বিষয়টিকে আমি সত্যি ভেবে নিয়েছিলাম। কোনোভাবেই বুঝতে পারি নাই আমরা প্রতারিত হচ্ছি। তার কথামত স্বর্ণালংকার নগদ টাকাসহ প্রায় ২০ লক্ষ টাকার অর্থ সম্পদ তার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। আমরা প্রতারিত হয়েছি। এই প্রতারণায় আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম।’
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করে দেখি কতদূর কি করা যায়।’
কেকে/ এমএস