জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ফোনালাপের অডিওতে নারীকণ্ঠটি নিজের বলে স্বীকার করেছেন এনসিপি নেত্রী নীলা ইসরাফিল।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এই কথোপকথনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে জানান, ওই অডিও রেকর্ড তিনি নিজেই করেছিলেন, তুষারের অনাকাঙ্ক্ষিত প্রস্তাব ও তার ডিবির সঙ্গে কথোপকথনের প্রসঙ্গ তাকে উদ্বিগ্ন করে তোলে বলেই এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হন।
নীলা ইসরাফিল লেখেন, নেপালে যাওয়ার পর থেকে তুষার প্রায়ই ফোন করত এবং তার আলাপের ধরন পাল্টে যেতে থাকে। সে আমাকে নানা রকমভাবে অ্যাপ্রোচ করতে থাকে—‘তোমার ঠোঁট সুন্দর’, ‘তোমার স্লোগান আমাকে আকৃষ্ট করে’, ‘তোমার ছবি দাও’। আমি সবসময় তাকে অনুরোধ করতাম, আমাদের সম্পর্ক ফর্মাল ও সাংগঠনিক থাকুক।
তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির শেষে আমি দেশে ফিরি। রোজার সময় একদিন তুষার আমাকে আপত্তিকর একটি কথা বলে, যেটা শুনে আমি জানিয়ে দিই, আর কথা বলতে চাই না। এরপরও সে চাপ দিতে থাকে।
একপর্যায়ে তুষার তাকে জানায়, ‘ডিবির (গোয়েন্দা পুলিশ) সঙ্গে তার কথা হয়েছে এবং নীলার বিষয়ে তাদের আগ্রহ রয়েছে। তুষার দাবি করে, সে ডিবিকে বলেছে, নীলা তার গার্লফ্রেন্ড। এ কথার সত্যতা যাচাই ও নিরাপত্তার ভাবনা থেকেই আলাপ রেকর্ড করেন বলে জানান তিনি।
নীলা বলেন, আমি মোট ৪৭ মিনিট অডিও রেকর্ড করি। ওই রেকর্ড আমি নিরাপত্তার কারণে সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এবং তুষারের সাবেক সঙ্গীদের কাছে শেয়ার করি।
তিনি জানান, বিষয়টি তিনি এনসিপির ভেতরে গোপনীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করলেও পরে দলের অভ্যন্তরেই প্রতিহিংসামূলক আচরণ শুরু হয়। তুষার আমাকে এনসিপির বিভিন্ন সেল থেকে সরানোর চেষ্টা করে। সহযোগীদের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায়। এরপর হঠাৎ করেই কাটা অডিও ভাইরাল হয়।
নীলা অভিযোগ করেন, অডিও প্রকাশের পর আমার সহকর্মীরা আমার পাশে দাঁড়ায়নি। বরং মিডিয়া ট্রায়াল শুরু হয়। কেউ কেউ বলেন, আমি পদ-পদবির লোভে এসব করছি। কেউ বলেন, আমি অপেশাদার। কিন্তু তুষারের মতো কেউ যদি আমার মতো একজন সাহসী নারীকে এভাবে দমন করতে পারে, তাহলে অন্য নারীরাও নিরাপদ থাকবে না।
তিনি বলেন, আমার অপরাধ—আমি পাশ্চাত্য পোশাক পরি, সহজভাবে কথা বলি, তুমি করে বলি। কিন্তু আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে চুপ থাকিনি।
এনসিপির প্রতি নিজের দায়বদ্ধতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি এনসিপিকে ভালোবাসি। তাদের ত্রুটি থাকতে পারে, কিন্তু তারা দেশকে ভালোবাসে। আমি চেয়েছিলাম তুষার শুদ্ধ হোক, তাই বিষয়টা ভেতরে মিটমাট করতে চেয়েছিলাম।
স্ট্যাটাসের শেষে নীলা বলেন, এই বিষয়ে এটিই আমার ফাইনাল বক্তব্য। আমি আর কিছু বলতে চাই না। যা বলার তদন্ত কমিটিকে বলব। আমি এই ঘটনা পেরিয়ে যেতে চাই।
কেকে/এএম