এক সময়ে বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম ছিলো সিনেমা হল। শুধু উৎসব নয়, সারা বছর স্বপরিবারে সিনেমা হলে যেতেন দর্শক। সেই সময় দর্শকের চাপে সিরাজগঞ্জ শহরের ৫টি হলে দেখা দিতো টিকিট সংকট। সিনেমা হলের সামনে সাইনবোর্ডে লেখা ঝুলত হাউজফুল। এসব এখন শুধুই অতীত, রূপকথার গল্পের মতো।
বর্তমানে সিরাজগঞ্জ শহরে সিনেমা হলগুলো বন্ধ থাকায় ভাড়ার মাধ্যমে ভাসানী মিলনায়তনে ঢাকাই সুপারস্টার শাকিব খানের নতুন সিনেমা ‘বরবাদ’ চলছে। ঈদের দিন থেকে মেহেদি হাসান হৃদয় পরিচালিত শাকিব খান ও ভারতের নায়িকা ইধিকা পাল অভিনীত বাংলা ছায়াছবি চালানো হচ্ছে। জনপ্রতি দেড় শত টাকায় টিকিট কেটে সিনেমা দেখছেন দর্শকরা। প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হচ্ছে সিনেমা। এতে দর্শকের ভিড় দেখা গেছে। দর্শকদের বেশ সাড়াও মিলছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
বুধবার (২ এপ্রিল) দুপুরে শহরের পৌর ভাসানী মিলনায়তনে দেখা যায়, পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে মিলনায়তনের সামনে অনেক দর্শনার্থীরা ভিড় করছে।
আয়োজক সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৩টা, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা ও রাত সাড়ে ৯টায় শো চলছে। টিকিট মূল্য ১৫০ টাকা হওয়ায় বেশ সাড়াও পাচ্ছেন তারা। প্রত্যেক শোতে ৪০০টি আসনে বসে ছবি দেখতে পারছেন দর্শনার্থীরা। শাকিব খানের নতুন সিনেমা প্রদর্শনকে কেন্দ্র করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লাগানো হয়েছে পোস্টার। একই সঙ্গে করা হচ্ছে মাইকিং। গত বছরও একই ভাবে সিনেমা চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু প্রতিহিংসামূলক কারণে মাত্র ৩ দিন চালানোর পর সিনেমা বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। এবার আশা করছি ১৫ থেকে ২০ দিন প্রজেক্টরের মাধ্যমে সিনেমা চালাতে পারব। সুস্থ বিনোদন উপভোগের জন্য অস্থায়ী এই সিনেমা হলে দর্শকদের আসার আহ্বান জানিয়েছেন এই আয়োজক।
পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সিমেনা দেখতে আসা কয়েকজন বলেন, এক সময়ে স্বপরিবার নিয়ে সিনেমা হলে আসতাম। কিন্তু সেই আনন্দ আর দেখা যায় না। বর্তমানে সিনেমার করুণ দশা। ভালো সিনেমার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে সিনেমা হলগুলো। দীর্ঘদিন ধরে শহরের ৫টি হল বন্ধ রয়েছে। একারেন সিনেমা দেখা হয় না। তবে ঈদে শাকিব খানের মুক্তি পাওয়া ‘বরবাদ’ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। সিনেমাটি হলে দেখতে পারলে আরো বেশি ভালো লাগতো। সিনেমা দেখতে আসা দর্শকেরা শহরের সিনেমা হলগুলো পুনরায় চালুর দাবি জানিয়েছেন।
আয়োজক ও চলচ্চিত্র নৃত্য পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি সিরাজগঞ্জের সন্তান। বাংলা সিনেমার ঐতিহ্য ধরে রাখতে ভাসানী মিলনায়তনটি ভাড়া নিয়ে ‘বরবাদ’ সিনেমা প্রদর্শনের আয়োজন করেছি। এতে সিরাজগঞ্জের সিনেমাপ্রেমী মানুষ ভিড় করছেন। এ জন্য মন্ত্রণালয়, সিনেমা হল মালিক, পরিচালক, প্রযোজক ও পরিচালক সমিতি এবং সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পৌরসভার অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক কামরুল ইসলাম বলেন, ঈদ উপলক্ষে পৌরবাসীকে বাংলা সিনেমার সুস্থ বিনোদন উপহার দেওয়ার জন্য দৈনিক ভাড়ার মাধ্যমে ভাসানী মিলনায়তনে সিনেমা চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মিলনায়তনের সার্বিক নিরাপত্তা দেবে আয়োজকেরা। পৌরবাসীর বিনোদন প্রাপ্তির আশায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে সিসেমার করুণ দশা। ভালোমানের সিনেমার অভাবে সারাদেশের মতো সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের নীলা, লক্ষ্মী, গোধুলি, মমতাজ ও মৌসুমী নামে ৫টি সিনেমা হলসহ জেলার ৩৪টি সিনেমা হলের অধিকাংশই এখন ছাত্রবাস, গোডাউন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও গুদামঘর হিসেবে ভাড়ায় ব্যবহার করছেন হল মালিকেরা।
কেকে/এআর