বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষের মনে রাসেল ভাইপার আতঙ্ক
সেলিম সানোয়ার পলাশ, গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি
🕐 ৩:৫২ অপরাহ্ণ, মে ২২, ২০২৪
![বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষের মনে রাসেল ভাইপার আতঙ্ক](https://www.kholakagojbd.com/media/main/2025/01/121_8.jpg)
বরেন্দ্র অঞ্চলে ভয়ঙ্কর বিষধর সাপ রাসেল ভাইপার নিয়ে এখনো আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন কৃষকসহ সাধারণ মানুষ। বোরো ধান কাটার সময় এ আঞ্চলে রাসেল ভাইপার সাপের দেখা বেশি মেলে। এই বিষধর সাপকে চন্দ্রবোড়া বা আইল বোড়া নামেই চেনে এ অঞ্চলের সাধারন মানুষ।
রাসেল ভাইপার এর বৈশিষ্ট হচ্ছে এটি লেজের উপর ভর করে চলতে পারে। এমনকি মানুষকে তেড়ে গিয়ে কামড়ায়। কামড় দেওয়ার সাথে সাথে আক্রান্ত ব্যাক্তি অচেতন হয়ে যায়। এ সাপের গর্জন খুব ভয়ঙ্কর। এ অঞ্চলে রাসেল ভাইপারের আতঙ্ক এমনই যে, সাপের কামড়ে কারো মৃত্যু হলে স্থানীয়দের ধারণা রাসেল ভাইপার সাপে কামড়িয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকদের কাছে আতঙ্কের বিষয় হয়ে উঠেছে রাসেল ভাইপার। আতঙ্কের ফলে কৃষি শ্রমকিরা জমিতে ধান কাটতে চাচ্ছেনা। পাওয়া যাচ্ছেনা কিছু কিছু এলাকায় ধান কাটা শ্রমিক। এ মৌসুমে ইতিমধ্যে একজনের প্রাণ নিয়েছে রাসেল ভাইপার।
দীর্ঘ ২৫ বছর বিলুপ্ত থাকার পর ২০১৩ সালে হঠাৎ এ সাপটির দেখা মেলে এ অঞ্চলে। ওই বছরই ভয়ঙ্কর এ সাপটি তিনজনের প্রাণ কেড়ে নেয়। এরপর থেকে নিয়মিত মানুষের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে সাপটি।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, রাসেল ভাইপার যে মানুষকে কামড়ায় তাকে বাঁচানো খুবই কষ্টকর। এ সাপের কামড়ে কিডনি খুব দ্রুত আক্রান্ত হয় । অনেক সময় রাসেল ভাইপারের বিষ নিস্ক্রিয় করা গেলেও কিছুদিন পর দংশিত স্থানে পচন ধরে। তারপর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ওই রোগী মারা যান।
মে মাসে প্রায় ১০টি রাসেল ভাইপার সাপকে পিটিয়ে মেরেছে কৃষকরা। এর মধ্যে সামাউন নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। জানা যায়, গোদাগাড়ী উপজেলার চম্পকনগর গ্রামের বাসিন্দা সামাউন গত (৫ মে বুধবার) পদ্মা নদীর উপাওে চর এলাকায পাকা ধান কাটতে গিয়ে রাসেল ভাইপারের কামড়ালে সাথে সাথে তার মূত্যু হয়। গত ১৬ মে গোদাগাড়ী পৌরসভার সুলতানগঞ্জ উ”চ বিদ্যালয় এর পাশে সারাংপুর কাচারীপাড়া কৃষকরা বোরো পাকা ধান কাটছিল এসময় ফারুক নামের এক কৃষক সাপটি দেখতে পেলে সবাই মিলে সাপটি পিটিয়ে মেরে ফেলে। ১৮ মে ও ১৯ মে দুপুরে গোদাগাড়ী পৌরসভার কুঠিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে থেকে দুইদিনে রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পেলে স্থানীয়রা সাপ মেরে ফেলে। এছাড়াও ১৮ মে পোতাহার (পালসা) এলাকায় ধান ক্ষেতে কৃষকরা রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পেলে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা জায়, ২০১৬ সালে এপ্রিল মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে মেহেদি হাসান (১০) মাঠে ঘাস কাটার সময় তার বাম পায়ে কামড়ায় রাসেল ভাইপার। শিবগঞ্জ উপজেলার জামাই পাড়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে বাবু (৮) কে কামড়ায় রাসেল ভাইপার।
১৯৮৫ সালের দিকে এ অঞ্চলে রাসেল ভাইপার সাপটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু ২০১৩ সালের দিক থেকে আবারো হঠাৎ করে দেখা যায় ভয়ঙ্কর বিষধর এই সাপ। ওই বছর জার্মানির আন্তর্জাতিক বিষ গবেষণা কেন্দ্রের একটি দল গবেষণার জন্য এস রাজশাহীর তানোর উপজেলা থেকে দুটি রাসেল ভাইপার ধরে নিয়ে যায়। এর একটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের তৎকালীন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আজিজুল হক
আজাদ নিজের কাছে রাখেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অশোক ফাউন্ডেশনের ফেলো এবং বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আবু সাইদ মতে, বাংলাদেশে প্রায় ১০০ প্রজাতির সাপ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিষধর তিন প্রজাতির সাপের মধ্যে রাসেল ভাইপার একটি। দুই থেকে তিন ফুট লম্বা এই সাপটি বেশিরভাগ সময় গর্তেই ঘাপটি মেরে থাকে। তবে খিদে পেলে এটি ইদুর ও ঘাস ফড়িং জাতীয় বিভিন্ন পোকামাকড় শিকারের জন্য বের হয়। সাপটির মাথার দিক অনেক চিকন এবং ছোট হওয়ায় দ্রুত গতিতে সে মানুষকে দংশন করতে পারে। অন্যান্য সাপের চেয়ে এটির দাঁতও বেশ বড়। একবার কামড়েই ২৬০ মিলিগ্রাম বিষ প্রয়োগ করতে পারে। তবে মাত্র ৪০ মিলিগ্রাম বিষ প্রয়োগ করতে পারলেই মানুষের মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ বলেন, মাঠে সাপের উৎপাতের বিষয়টি আমি শুনেছি। কৃষকরা আমাদের কাছে বিষয়টি বলছেন। আমরা তাদেরকে ভীত না হতে বলেছি। মাঠে ধানক্ষেতে যাওয়ার জন্য লাঠি রাখার পরামর্শ দিয়েছি। কয়েকজন কৃষককে ড্রাম বুট দেয়া হয়েছে এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউএনও স্যার কৃষকদের জন্য একটি প্রকল্প করে ২৫-৩০ হাজার কৃষককে ড্রাম বুট(জুতা) দেয়া
হবে বলেও তিনি জানান।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, রাসেল ভাইপারের কামড়ের রোগীদের চিকিৎসার জন্য মেডিক্যালে দ্রুত নেওয়া দরকার। এই সাপের কামড়ালে চিকিৎসার জন্য মেডিক্যালে যন্ত্র রয়েছে। তবে যন্ত্রটি চালানোর জন্য প্রতি ৭২ ঘণ্টায় ১টি করে সার্কিট প্রয়োজন। যার প্রতিটির দাম ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
![](https://www.kholakagojbd.com/images/archive-image.jpg)