বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মফিজুর রহমান নিখোঁজের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন (আইইবি) ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও পানি প্রকৌশলী সমিতি (বিডব্লিউপিইএ)।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) আইইবির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মো. সাব্বির মোস্তফা খান এবং বিদ্যুৎ ও পানি প্রকৌশলী সমিতির মহাসচিব প্রকৌশলী মো. শাহেদুল আজিম সজল সাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
জানা যায়, মফিজুর রহমান হবিগঞ্জের বিবিয়ানা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন। কয়েকদিন ধরে পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এ ঘটনায় টঙ্গি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন স্বজনরা।
মফিজুর রহমানের স্ত্রী শারমিন আক্তার জানান, টঙ্গিতে পিডিবির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে একদিনের একটি প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে অংশ নিতে শনিবার বিকেলে ঢাকার ডেমরায় স্বশুর বাড়িতে যান মফিজুর। পরদিন রোববার সেখান থেকে টঙ্গিতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষে দুপুরের দিকে বের হন।
এই সময়ের মধ্যে মোবাইল ফোনে ৩-৪ বার স্বাভাবিক কথা হয়েছে উল্লেখ করে শারমিন জানান, ‘বিবিয়ানা থেকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মফিজুরের বদলি হওয়ায় পরদিন সোমবার (গতকাল) তার সেখানে যোগদানের কথা ছিল। রোববার সর্বশেষ সন্ধা পৌনে ৬টার দিকে আমার সঙ্গে কথা হয়। তখন তিনি জানান, আমি বিদ্যুৎ ভবনে পিডিবি অফিসের দিকে যাচ্ছি। ডেমরায় ফিরতে দেরি হবে।’
‘রাত ৮ টা ২০ মিনিটের দিকে আমার মোবাইলে একটা ডাচবাংলা ব্যাংকের বুথ থেকে একটি ‘ওটিপি’ আসে। তখন আমার স্বামী আমাকে সেটি জানাতে বললে আমি তাকে জানায়। কিছুক্ষণ পর আরেকটি ওটিপি আসে। এরপর তাকে ফোন দিলে তিনি আর ফোন ধরেননি। রাত ১১টার দিকে ফোন দেওয়া হলে তা বন্ধ দেখায়,’ যোগ করেন শারমিন।
তার ভাষায়, ‘রাত আড়াইটার দিকে হঠাৎ ঘুম ভাঙলে তার মোবাইলে ফোন দিয়ে সেটি বন্ধ দেখায় আমার বাবাকে ফোন দিয়ে জানতে চাই মফিজুর বাসায় পৌঁছেছেন কি না। বাবার কাছ থেকে ‘না’ সূচক জবাব পেলে চিন্তায় পড়ে যান। তখন মফিজুরের সহকর্মী ও বন্ধুদেরকে জানান বিষয়টি। এ সময় জানতে পারি তার দুই সহকর্মীর কাছ থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা এবং এক বন্ধুর কাছ থেকে ২ লাখ টাকাসহ মোট ৫ লাখ টাকা নিয়েছে মফিজুর। এই টাকা নেওয়া হয়েছে রোববার রাত ৮টা থেকে পৌনে ১০টার মধ্যে।’
শারমিন জানান, মফিজুরের এক বন্ধু তাকে জানান তার কাছে ফোন দিয়ে দুই লাখ টাকা চাইলে সন্দেহ হয়। বিষয়টি নিশ্চিত হতে তখন ওই বন্ধু মফিজুরকে ভিডিও কল দিতে বললে সে ভিডিও কল দেয়। এসময় তাকে একটি কক্ষের মধ্যে গেঞ্জি ও পায়জামা পরা অবস্থায় দেখা যায়। এরপর তাকে ২ লাখ টাকা পাঠান।
মফিজুরের স্ত্রী আরও জানান, ‘আমার জানামতে তার কোনও শত্রু নেই। তাছাড়া কোথাও লেনদেন করলে সেটাও আমার জানার কথা। কিছুই বুঝছি না। তার জন্য আমরা সবাই উদ্বিগ্ন। দ্রুত সন্ধান পেতে থানায় ডায়েরি করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টঙ্গি থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. বায়েজীদ নেওয়াজ বলেন, ‘তদন্তে এখন পর্যন্ত যা পেয়েছি তা হলো-মফিজুর রোববার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে টঙ্গির ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বের হন। রাত ১টার দিকে তার মোবাইল নেটওয়ার্কের অবস্থান ছিলো ঢাকার মান্ডা এলাকায়। ভোর ৪টার দিকে তার অবস্থান দেখায় মতিঝিলে। সকালের দিকে (সোমবার) তিনি আবার মান্ডাতে ফিরে আসেন। এই সময়ে তিনি ডাচবাংলা ব্যাংকের তিনটি বুথে গেছেন। এরপর আর মফিজুরের অবস্থান জানা যাচ্ছে না। তবে আমরা আমরা বিভিন্নভাবে তাকে খুঁজে বের করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
টঙ্গি থানায় মফিজুরের শ্যালক মো. মাহবুবুর রহমান যে ডায়েরি করেছেন তাতে উল্লেখ করা হয়, নিখোঁজ মফিজুরের বয়স আনুমানিক ৪১ বছর। শ্যামলা বর্ণের ৫ ফুট ৭ ইঞ্জি উচ্চতা এবং ৭০ কেজি ওজনের এই ব্যক্তি পাঞ্জাবি, পাজামা ও জুতা পরা ছিলেন।
কেকে/ আরআই