বিশ্বে প্রথমবারের মতো দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণে প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রশিক্ষণ “২০ আওয়ারস ট্রেনিং ফর কেয়ারার” শীর্ষক তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে ইনস্টিটিউট অব প্যালিয়েটিভ কেয়ার-বাংলাদেশ (আইপিসি-বি)।
৭-৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর মিরপুরে ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুলের (বিএমআইএস) প্রশিক্ষণ কক্ষে।
এই অনন্য উদ্যোগে ১৫ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং ৩ জন সহকারী প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষক ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সন্তানের মায়েরা। প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করা হয়।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান আইপিসি-বি প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি অব বাংলাদেশ (পিসিএসবি)-এর একটি প্রকল্প, যা ২০১৩ সাল থেকে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের অধীনে নিবন্ধিত এবং ২০২৫ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কর রেয়াত লাভ করেছে। উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল বই প্রকাশেও কাজ করছে।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচির পরিকল্পনায় ছিলেন পিসিএসবি’র সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া। বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘রিয়েল ভিউ’, যার প্রধান ফাহিমা খাতুন।
সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া বলেন, “দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের প্যালিয়েটিভ কেয়ারে সম্পৃক্ত করা মানবিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে একটি অনন্য উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।”
ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুলের অধ্যক্ষ গ্লোরিয়া চন্দ্রাণী বাড়ৈ বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠান এমন মানবিক উদ্যোগের অংশ হতে পেরে গর্বিত। এটি অংশগ্রহণকারীদের পাশাপাশি আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও সহমর্মিতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ বাড়াবে।” তিনি আরো জানান, “১৯৭৭ সালে রেভা. ভেরনিকা এন. ক্যাম্পবেল দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য বিএমআইএস প্রতিষ্ঠা করেন, যা ছিল দেশের প্রথম আবাসিক সুবিধাসম্পন্ন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এবং এখান থেকেই প্রথম ব্রেইল বইয়ের প্রচলন শুরু হয়।”
আইপিসি-বি’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, “বিশ্বে যেখানে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কেউ প্যালিয়েটিভ কেয়ার ভাবেনি, সেখানে বাংলাদেশে আমরা সফলভাবে এমন একটি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছি— এটি নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক সাফল্য।”
অনুষ্ঠানের শেষে বিএমআইএস শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় এক মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন অতিথি ও অংশগ্রহণকারীরা। সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন— পিসিএসবি’র কোষাধ্যক্ষ সালাহউদ্দীন আহমাদ, ডা. নূরজাহান বেগম, ডা. তাসনিম জেরিন, ডা. সীমা রাণী সরকার, ডা. নাদিয়া ফারহীন, লেখক আসিফ নবী, খালিদ আরাফাত অব্যয়, ফারজানা মালা, শাহাদৎ রুমন প্রমুখ।
কেকে/এআর