মোহাম্মদপুর ও বংশালে আগুনে পুড়ল গাড়ি ও দোকানপাট, নাশকতার আশঙ্কা স্থানীয়দের রাজধানীতে একই রাতে দুটি স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (৮ নভেম্বর) দিবাগত রাতে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সেবা অটোমোবাইল গ্যারেজ এবং পুরান ঢাকার বংশাল এলাকায় দুটি পৃথক স্থানে আগুন লাগে।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাত ১২টা ৫০ মিনিটে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় সেবা অটোমোবাইল গ্যারেজে আগুন লাগে। এতে গ্যারেজে থাকা ৪–৫টি গাড়ি পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একই রাতে রাত ২টা ১০ মিনিটে বংশাল এলাকায় একটি অফিসে আগুন লাগে।
মোহাম্মদপুরের গ্যারেজ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৫–৬ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মালিক মো. জসিম। তিনি বলেন, “কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি আগুনের ঝলকানি। মুহূর্তেই সব গাড়ি জ্বলে যায়।”
গ্যারেজের নিরাপত্তাকর্মী লোকমান বলেন, “আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে দেখি তিনজন লোক একটি মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছে। দুজন বাইকে উঠে যায়, আরেকজন পাশের ইকবাল টিম্বার ট্রেডার্সের দিক দিয়ে দৌড়ে পালায়। আমি ধরার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু সে গেট দিয়ে পালিয়ে যায়।”
স্থানীয়রা জানান, আগুন লাগার কিছুক্ষণ পরই বিকট শব্দ শোনা যায়, যা সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মতো মনে হয়েছিল। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা গেছে দুজন মোটরসাইকেলে দ্রুত চলে যাচ্ছে এবং একজন দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে এরাই আগুন লাগিয়ে পালিয়ে গেছে।
আগুনে পুড়ে যাওয়া গাড়িগুলোর মধ্যে একটি অ্যাম্বুলেন্সও ছিল। অ্যাম্বুলেন্সের মালিক সাগর বলেন, “আমার অ্যাম্বুলেন্সের দাম প্রায় ১০ লাখ টাকা। এটি মেরামতের জন্য গ্যারেজে রেখেছিলাম। এখন পুরোপুরি পুড়ে গেছে। এই গাড়ি দিয়েই অসুস্থ ও আহতদের সহযোগিতা করতাম—এখন কীভাবে চলব বুঝতে পারছি না। আমিও এই অ্যাম্বুলেন্সের আয় দিয়েই চলতাম।”
ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার শাহজাহান হোসেন জানান, খবর পাওয়ার পর দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে একই রাতে পুরান ঢাকার বংশালে বিএনপি অফিসের পাশে চারতলা ভবনের নিচতলায় আল-নাসির মিষ্টির দোকানে আগুন লাগে। রাত ২টা ১০ মিনিটে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণকক্ষের ডিউটি অফিসার মো. শাহজাহান জানান, আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি, তবে কেউ হতাহত হয়নি।
এই ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক বলেন, “কে বা কারা ককটেল বিস্ফোরণ বা পেট্রোলবোমা জাতীয় কিছু নিক্ষেপ করে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে এবং ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
স্থানীয়দের দাবি, সম্প্রতি মোহাম্মদপুর এলাকায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিন স্থানে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে—মিনা বাজার, কাদেরাবাদ হাউজিংয়ের বহুতল ভবন ও এবার বেড়িবাঁধের গ্যারেজে। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাদের ধারণা, এসব আগুনের পেছনে নাশকতার পরিকল্পনা থাকতে পারে।
কেকে/এআর