রেড চিটাগং ক্যাটল, নর্থ বেঙ্গল গ্রে, মিরকাদিমসহ দেশীয় প্রজাতির এসব গরুর জাত সংরক্ষণের মাধ্যমে প্রাণিসম্পদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব যেসব গরুর জাত রয়েছে সেগুলো নানা চড়াই-উৎরাই পার হয়ে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে বেঁচে আছে। এগুলোকে আরও উন্নত করতে এসবের উপর গবেষণা বাড়াতে হবে।
বুধবার (৫ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর হোটেল সারিনায় বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা এবং প্রাণিসম্পদ খাতে ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কনট্রিবিউশনস (এনডিসি) বাস্তবায়ন জোরদারকরণে ‘স্কেলিং-আপ লাইভস্টক ক্লাইমেট একশনস টু ইনহেন্স এনডিসি ফ্যাজ-২’ -শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)-এর প্রতিনিধি জিয়াওকুন শি, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক প্রমুখ।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন এফএওর ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ড. খান শহিদুল হক। এ সময় দুগ্ধ ও গরুর মাংস উৎপাদন ব্যবস্থায় গ্রিনহাউজ গ্যাস (জিএইচজি) নির্গমন হ্রাসে এলডিডিপি প্রকল্পের অর্জন এবং পরবর্তী পথ নির্দেশনা বিষয়ে উপস্থাপনা করেন প্রকল্পের উপ-পরিচালক ড. শাকিফ-উল-আজম।
মিটিগেশন ও অ্যাডাপ্টেশনের ওপর গুরুত্বারোপ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, আমরা নিজস্ব প্রজাতির গরুগুলো দিয়ে যদি জাত উন্নত করি তাহলে মিটিগেশন ও অ্যাডাপ্টেমনের সঙ্গে খাপ খাইনে নিতে পারবে। কেননা দীর্ঘদিন যাবত নানা ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যে এসব প্রাণী টিকে আছে।
এ বছর এফএওর সহযোগিতায় কপ-৩০ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব সহযোগিতার মাধ্যমেই কপে যাবে বলে প্রত্যাশা করি।
তিনি এনডিসিতে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সেক্টরের বিষয় নিয়েও পরিকল্পনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাপপ্রবাহ, খরা, বন্যা ও হিট স্ট্রিকে প্রাণিকূল ক্ষতির মুখে পড়ে। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়ে। এসবের ক্ষতিপূরণের দিকটাও দেখতে হবে।
প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বের অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলো শুধু আমাদেরকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর কথা বলে। তারা বলে- ধান চাষ কমাও, গরু পালন কমাও অথচ নিজেরাই বিপুল পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করে চলছে। তারা তা বন্ধ করছে না। ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোকে কোন ক্ষতিপূরণও দিচ্ছে না।
এফএওর প্রাণিসম্পদ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ জ্যাঁ দে দ্যু আয়াবাগাবো তার উপস্থাপনায় বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সহনশীলতা ও নির্গমন হ্রাসে অর্থায়ন অত্যন্ত কম। এখাতে বিনিয়োগের প্রয়োজন ৫ হাজার বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অথচ বর্তমান বিনিয়োগের পরিমাণ হচ্ছে মাত্র ৪৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রিপন কুমার মন্ডল তার উপস্থাপনায় বলেন, আমাদের লাইভস্টক সেক্টরে সামান্য ইন্টারভেনশন ও গোবর ম্যানেজমেন্ট ও খাবার দেওয়ার মাধ্যমে ইমেশন প্রায় ৫০ শতাংশ কমানো সম্ভব। কেননা আমরা গোবরগুলো খোলা রাখছি অথচ এটি শুধু ঢেকে রাখলেই ১০ শতাংশ ইমেশন কমে যায়। তা ছাড়া আমরা কার্বন ক্রেডিড বিক্রির জন্য আলোচনায় যেতে পারি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জিয়াওকুন শি বলেন, কম কার্বন, জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক কৃষি, বনায়ন এবং অন্যান্য ভূমির ব্যবহারের (এএফওএলইউ) ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন। তা ছাড়া গ্রামীণ জীবিকা উন্নতকরণ ও প্রাকৃতিক কার্বন নিঃসরণকে শক্তিশালী করতে হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি, পুষ্টি এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থানে পশুপালনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্বীকার করে তিনি বলেন, এফএও ‘এনডিসি বাস্তবায়ন বৃদ্ধির জন্য প্রাণিসম্পদ জলবায়ু কর্মকাণ্ডের স্কেলিং-আপ’ প্রকল্প চালু করেছে। এই উদ্যোগটি জাতীয় জলবায়ু কৌশলের সাথে প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রকল্পের লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন।
কর্মশালায় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, গবেষক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং এনজিও প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
কেকে/ আরআই