প্লে ব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর, বাংলা চলচ্চিত্রের প্লেব্যাক সংগীতে এক নতুন ধারা তৈরি করা কিংবদন্তি এ কণ্ঠশিল্পীর জন্মদিন আজ। ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর তিনি রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন। দীর্ঘ দিন ক্যানসারের সঙ্গে সংগ্রামের পর ২০২০ সালের ৬ জুলাই তিনি না ফেরার দেশে (রাজশাহী) চলে গেলেও তার কালজয়ী কণ্ঠ আজও বাংলা গানের ইতিহাসে চিরন্তন।
জীবদ্দশায় এন্ড্রু কিশোর জন্মদিনকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতেন না। তিনি সাধারণত ঘরোয়া পরিবেশে পরিবারের সঙ্গে দিনটি উদযাপন করতেন। তবে, তার মৃত্যুর পর, পরিবার ও ভক্তরা তার স্মৃতিতে দিনটি পালন করেন। আজও তার পরিবার রাজশাহীর সমাধিস্থলে গিয়ে প্রার্থনা করেন এবং গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে তাকে স্মরণ করেন।
রাজশাহীতে জন্ম নেওয়া এই শিল্পীর সংগীতে প্রথম হাতেখড়ি হয় মায়ের কাছেই। তার মা ছিলেন একজন সংগীতপ্রেমী ও কিংবদন্তী শিল্পী কিশোর কুমারের ভক্ত। মায়ের স্বপ্ন পূরণের তীব্র ইচ্ছা থেকেই এন্ড্রু কিশোর সংগীতাঙ্গনে পা রাখেন। প্রাথমিকভাবে তিনি আব্দুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে সংগীতের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেন। স্বাধীনতার পর নজরুল, রবীন্দ্র, আধুনিক, লোকসংগীত ও দেশাত্মবোধক গানে দক্ষতা অর্জন করে তিনি রাজশাহী বেতারে তালিকাভুক্ত হন।
এন্ড্রু কিশোরের প্লেব্যাক জীবনের সূচনা হয় ১৯৭৭ সালে। চলচ্চিত্র ‘মেইল ট্রেন’-এর ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মাধ্যমে তিনি প্রথম চলচ্চিত্রে কণ্ঠ দেন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’, ‘প্রতিজ্ঞা’সহ অসংখ্য ছবিতে গান গেয়ে তিনি শ্রোতাদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়ে নেন।
১৯৮২ সালে ‘বড় ভালো লোক ছিল’ ছবির ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’ গানের জন্য তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর আরও বহুবার তিনি এই সম্মাননা অর্জন করেন।
তার কণ্ঠে জীবন পাওয়া অসংখ্য কালজয়ী গানের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘দাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘এক জনমের ভালোবেসে ভরবে না মন’, ‘পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমার ছোঁয়াতে খুঁজে পেয়েছি’ ইত্যাদি।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি লিপিকা এন্ড্রু ইতির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। এই দম্পতির দুই সন্তান, সংজ্ঞা ও সপ্তক।
তার সুরের জাদুতে তিনি যেমন কোটি মানুষের হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন, তেমনই তার চলে যাওয়ার দিনটিও বাংলা সংগীতাঙ্গনে এক অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি করেছে।
আজ এন্ড্রু কিশোরের জন্মদিনে তাকে স্মরণ করছেন শিল্পী, ভক্ত ও সংগীতপ্রেমীরা। তার গানগুলো বাজছে কোটি কোটি শ্রোতার অন্তরে।
কেকে/ এমএ